কাতারের দোহায় এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম থেকে লুসাইল স্টেডিয়ামের দূরত্ব খুব বেশি না, কাছাকাছি। শুক্রবার রাতে এডুকেশন স্টেডিয়ামে যখন ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ তখন লুসাইল স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে টিভির সামনে আর্জেন্টাইন সাংবাদিকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে পড়েছিলেন। ব্রাজিল হারবে সেই প্রার্থনায় আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা। নেইমার অবিশ্বাস্য একটা গোল করে যখন এগিয়ে দিলেন পুরো মিডিয়া সেন্টার নিশ্চুপ। ক্রোয়েশিয়া গোল শোধ করার সঙ্গে হইহুল্লোড়ে মিডিয়া সেন্টার যেন ভেঙে পড়ার অবস্থা। এর আগে তো মনেই হচ্ছিল না মিডিয়া সেন্টার ভরা আর্জেন্টাইন সাংবাদিক। নেইমারদের হারে আর্জেন্টাইন সাংবাদিকদের আনন্দ দেখা গেছে। আর যখন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি তাদের মুখেই তাকানো যাচ্ছিল না। নেইমারের মতো মেসিরও বিদায় হয়নি। বিশ্বকাপের আলো জ্বালিয়ে রেখেছে মেসিদের আর্জেন্টিনা।
কাতারের দোহায় পথে পথে আলোচনা হচ্ছে ব্রাজিলের বিদায় আর্জেন্টিনার স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। আর্জেন্টিনা এখন স্বপ্নের পথে হাঁটছে। স্বপ্নটা বলতেই হচ্ছে কারণ আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো মারাদোনা সেই ৮৬ সালে শেষ বার ট্রফি দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ট্রফির পর আর্জেন্টিনার ঘরে ট্রফি যায়নি। মেসি আর্জেন্টিনাকে ট্রফি দেবেন দেবেন করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এবারও ব্যর্থতার গল্পটাই লিখতে যাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। অনেকর ধারণাও ছিল আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেবে। কারণ গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারায় আর্জেন্টাইন ভক্তরা ধরে নিয়েছিলেন সব শেষ। সেই আর্জেন্টিনা এখন সেমিফাইনালের বাধা মাড়িয়ে ফাইনালের মঞ্চ দেখতে চায়। ফাইনাল হতে আর্জেন্টিনা দুই ম্যাচ দূরে। কিন্তু এই পথ যে সহজ না সেটা বুঝতে হবে। কারণ কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও গোল হজম করে ম্যাচটা হারাতে যাচ্ছিল প্রায়। কিন্তু টাব্রেকিংয়ে নেদারল্যান্ডেসর প্রথম দুই শট গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে সেমিফাইনালে নিয়ে গেছেন।
নেদারল্যান্ডস দারুণ কামব্যাক করেও ভাগ্যের কাছে হেরে গেছে। আর্জেন্টিনার কাছে সেটা কোনো বিষয় নয়। মেসিদের কাছে এখন নতুন অস্ত্র হচ্ছে গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। এতো মেসি, ডি মারিয়া, পল, আকুনা, রোমেরো, ওতামেন্দি, আলভারেজ, এনজোদের নিয়েই সব হিসাব করেছিলেন মেসিরা। সেই দলের গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে নিয়ে কেউ ভাবেননি। সেই মার্তিনেজ এখন নায়কে পরিণত।
আর্জেন্টিনা এখন সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ১৩ ডিসেম্বর। ক্রোয়েশিয়ার রাশিয়া বিশ্বকাপে একই গ্রুপে ছিল আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া। সেই ম্যাচের দুঃসহ স্মৃতির কথা ভুলে যাননি মেসি। ৩-০ গোলে হারতে হয়েছিল। আবার সেই ক্রোয়েশিয়াকে এমন এক লড়াইয়ে পেয়েছে আর্জেন্টিনা, যেখান থেকে বেঁচে উঠতেই হবে মেসিকে।
ক্রোয়েশিয়াকে বিদায় করতে পারলে আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠবে। স্বপ্নের ট্রফি জয় করতে আর্জেন্টিনাকে দুই ম্যাচ অপেক্ষা করতে হবে। এতই কি সহজ হবে। দুই ম্যাচ মানেই কি দুই ম্যাচ। মনে নেই ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে ট্রফি ছোঁয়া হয়নি সেদিন।
আর্জেন্টাইন সাংবাদিকরা মেসিদের নিয়ে ব্যস্ত। কোচ লিওনেল স্কালিনো আবার আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দেখেছেন। ভুলগুলো নিয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ডি মারিয়া অনেক দেরিতে নেমেছিলেন। ডি মারিয়াকে নামার পর আর্জেন্টিনার আক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। একাধিক গোলের সুযোগও পেয়েছিলেন মেসিরা। সেটিও মাথায় রাখছেন কোচ।
খেলায় মাথা গরম না করলেও মেসি খেলা শেষে মাথা গরম করেছেন। আর্জেন্টিনা-নেদাল্যান্ডস ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়রা আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিলেন। মেসি নেদারল্যান্ডসের ডাগআউটে গিয়ে তাদের কোচ লুইস ফনগালের সঙ্গেও নাকি ভালো ব্যবহার করেননি। সংবাদ মাধ্যমে বেরিয়েছে মেসি ফনগালকে বলেছেন অনেক হয়েছে এবার চুপ থাকুন। এমনকি খেলা শেষে মিক্সড জোন দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় নিয়ম অনুসারে আর্জেন্টিনার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মেসি সেখানে দাঁড়িয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় নেদারল্যান্ডেসর জোড়া গোলের মালিক ভাউট ভেগহোর্স্টের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। ভাউট ভেগহোর্স্ট মেসির ইন্টারভিউর সময় দাঁড়িয়েছিলেন। সেটা দেখেই নাকি চটে গিয়ে মন্দ কথা বলতে ছাড় দেননি মেসি।
গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজও তার ক্ষোভের আগুন ঝরিয়েছেন খেলার পর। স্প্যানিশ রেফারি রেফারি আন্তেনিও মাতেওর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ বলেছেন,‘তোমরা রেফারিকে জিজ্ঞেস করো ইনজুরি টাইম ১০ মিনিট দিয়েছিল। এত সময় কোথায় নষ্ট হয়েছে। ক্রেজি অ্যারোগেন্ট রেফারি। সে ফ্রিকিকের সিদ্ধান্ত দিয়ে নেদারল্যান্ডসকে সুবিধা করে দিয়েছিল। কারণ স্পেন বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছে। আমাদেরকেও বাদ দেওয়ার চিন্তা করেছিল স্প্যানিশ রেফারি। আমরা ৪৫ মিলিয়ন মানুষের জন্য খেলেছি। আমাদের দেশটা এখন ইকোনমিক সংকটে রয়েছে। ঠিক এই সময়টা এমন একটা জয় আমাদের মানুষকে কিছুটা হলে স্বস্তি দেবে।’