বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া চীনের সিনোফার্মের করোনা টিকা বুধবার (১২ মে) বাংলাদেশে আসছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। প্রথম দফায় চীনের উপহার দেওয়া ৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ (সোমবার) ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সঙ্গে ভার্চুয়াল আলাপে এ তথ্য জানান চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ডব্লিউএইচও চীনের সিনোফার্ম টিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই টিকার ৫ লাখ ডোজ ১২ মে বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশ সরকারও চীনা টিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, এটি একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত।
করোনা মহামারির এই সময়ে ঢাকা ও বেইজিংয়ের এই সহযোগিতা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন লি জিমিং।
লি জিমিং আরও বলেন, উপহারের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা বুধবার এলেও বাংলাদেশ বাণিজ্যিকভাবে যে টিকা আনতে চায় তা আসতে সময় লাগবে। চীনের টিকার চাহিদা অনেক দেশে আছে। তাই বাণিজ্যিকভাবে যেটা বাংলাদেশ পেতে চায়, সেই টিকা পেতে বাংলাদেশের সময় লাগবে। তাছাড়া বাংলাদেশ সিনোফার্মকে অনুমোদন দিয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে।
তিনি বলেন, চীনের উপহারের টিকার জন্য বাংলাদেশকে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। অথচ এই অনুমোদনের জন্য দীর্ঘ তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। পরে টিকা পেতে বাংলাদেশ ৩০ এপ্রিল প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ আগেই অনুমতি দিলে চীনের টিকা আগে পেত।
চীন ইতোমধ্যে ২০০ মিলিয়ন টিকা বিশ্বের ৮০ দেশে বিতরণ করেছে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।
জানুয়ারি মাসের শেষ থেকে অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার শুরু হয় বাংলাদেশে। কিন্তু ভারতের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা বাংলাদেশে না পাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। তাই এখন বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভারতের টিকা নিয়ে সংকট শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
প্রথম দিকে চীন তাদের কোভিড টিকাগুলো সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে খুব কম তথ্য প্রকাশ করায় চীনা ভ্যাক্সিনগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চয়তার অভাব ছিল। তবে ৮ মে পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে তৃতীয় কোনো দেশে উদ্ভাবিত করোনা টিকার মধ্যে প্রথমবারের মতো সিনোফার্মের তৈরি করা কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
চীনে এবং অন্যান্য দেশে লাখো মানুষকে ইতোমধ্যেই এই টিকা দেওয়া হয়েছে। ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং মর্ডানার ভ্যাক্সিনের পর চীনের এই টিকাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করা বাংলাদেশে যারা ওই টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের একটা বড় অংশ যথাসময়ে ওই টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
৫ মে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন জানান, দেশে চাহিদার বিপরীতে এই মুহূর্তে
এই সংকট দূর করার নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ টিকা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেও তাকিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির কাছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ মিলিয়ন ডোজ করোনার টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা জরুরি ভিত্তিতে ৪ মিলিয়ন টিকা চেয়েছি। আর স্বাভাবিক অবস্থায় ১০ থেকে ২০ মিলিয়ন ডোজ টিকা চেয়েছি। বৈঠকে আমরা বলেছি, যখন অন্যান্য দেশকে করোনার টিকা দেওয়া হবে; তখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেন আমাদেরও দেওয়া হয়।