চলতি বছরই টানেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ চালুর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার জন্য চলছে জোর প্রচেষ্টা। এরই মধ্যে টানেলের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ শতাংশ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, ডিসেম্বরের মধ্যেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এ টানেল।
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘মে পর্যন্ত সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ শতাংশ। জুন মাসের কাজের অগ্রগতি এখনো হিসাব করা হয়নি। তবে আমরা প্রত্যাশা করছি শিডিউল অনুযায়ী এ বছরের শেষের দিকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে এ টানেল।’ তিনি বলেন, ‘চীনের সাংহাই বন্দরে লকডাউনের কারণে যন্ত্রপাতি সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে, যা কাজের গতিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’ শিডিউল অনুযায়ী দেশের অন্যতম এ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে টানেলের উভয় প্রান্তের অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮৫ শতাংশেরও বেশি। টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে চলছে ওজন স্কেল, টোলবক্স স্থাপনের কাজ। এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ড্রেন ও স্লোপ প্রটেকশনের কাজও এগিয়ে চলেছে সমানতালে। প্রথম টিউবে লেন স্ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পর এখন চলছে রোড সারফেজ স্থাপনের কাজ। এ ছাড়া দ্বিতীয় টিউবে লেন স্ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। টানেলের অভ্যন্তরের কমিউনিকেশন সিস্টেম, ভেন্টিলেশন এবং অন্যান্য কাজের জন্য সরঞ্জাম চীন থেকে শিগগিরই আনা হচ্ছে দেশে।
চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর আদলে কর্ণফুলী নদীতে তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামের অন্যতম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। মেগা এ প্রকল্পের এক প্রান্তে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। অপর প্রান্তে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। চীনের সাংহাইয়ের আদলে নদীর দুই তীরকে একই সুতোয় যুক্ত করবে এ টানেল। এ মেগা প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ও চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক যৌথ অর্থায়ন করছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্প-কারখানা ও পর্যটনশিল্পে। টানেল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার গাড়ি চলাচল করবে। প্রতি বছর ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে যান চলাচল। এ হিসাবে ২০৩০ সালে কর্ণফুলী টানেল দিয়ে যান চলাচল করবে গড়ে ৩৮ হাজার। ২০৪০ সালে তা বেড়ে হবে ৬২ হাজার এবং ২০৬০ সালে টানেল দিয়ে দৈনিক গড়ে যান চলাচল করবে ১ লাখ ৩০ হাজার।