কোভিড পরবর্তী বিশ্ব তোমায় লিখে দিবো
তৌহিদুল হক
মহামারীর দুর্বার গতি যেদিন থেমে যাবে,
তোমায় নিয়ে সহস্র পঙক্তি জুড়ে লিখবো বেঁচে থাকার গান।
মৃত্যুর অবারিত মিছিল যেদিন স্তিমিত হবে,
দীর্ঘজীবন কামনায় তোমার দরজায়-
হাজির হবো একগুচ্ছ ফুল হাতে।
লকডাউন শেষে যখন ফিরে পাবো জীবনের কোলাহল,
প্রিয় কোন রেস্তোরাঁয় কফির পেয়ালা হাতে
অশেষ মুগ্ধতায় শুনবো তোমার সব না বলা কথা।
কিংবা মুভি থিয়েটারের মৃদু আলোয় হিম-হিম শীতলতায়-
তোমায় কাছে টেনে একেঁ দিবো হঠাৎ চুম্বন।
সেদিন যুদ্ধ ফেরত সৈনিকের বর্মের মত-
খুলে ফেলবো মুখের মাস্ক হাতের গ্লাভস,
সামাজিক দূরত্বের প্রাচীর ভেঙে দিয়ে-
বুকে জড়িয়ে ধরে নেবো তোমার শরীরের ঘ্রাণ।
যেদিন হাহাকার থেমে যাবে একবেলা ত্রাণের জন্য,
আমি তখন রাস্তায় নেমে এসে চিরচেনা ভঙ্গিতে-
কোন রিকশাওয়ালাকে ডেকে বলবো “মামা, যাবা?”,
সেই রিক্সায় চেপে কোন মেঘলা আকাশের নীচ দিয়ে
তোমার গা ঘেঁষে ঘুরে বেড়াবো উদ্দেশ্যহীন।
ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে সদাহাস্য ঝালমুড়ি- ফুচকাওয়ালারা,
তোমায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সেদিন-
গোটা বোম্বাই মরিচ মাখানো স্ট্রিট ফুডে দিবো ডুব।
যেদিন হাসপাতালের দরজা থেকে বিনা চিকিৎসায়-
ফিরে যেতে হবে না অসুস্থ বাবা-মা-ভাই-বোনকে,
যেদিন একটি গোলাপ হাতে আমার পাড়ার কোণে
দিনের পর দিন রৌদ্র-বৃষ্টি-ঝড়ে প্রহরায় থাকা-
অপরিচিত থেকে আত্মীয় হয়ে উঠা
পুলিশ ভাইটিকে জানাতে পারবো পরম কৃতজ্ঞতা।
সেদিন তোমার হাত ধরে পিচঢালা রাস্তায়,
কাঁধে কাঁধ জড়িয়ে হেঁটে বেড়াবো বিজয়ী বেশে।
যেদিন পত্রিকার পাতায় কী অনলাইনে
করোনাকে নিয়ে হবে না শিরোনাম কোনো;
সেদিন “শিরোনামহীনের” মত নগরে-গঞ্জে-ঘাটে
অবাক বিস্ময়ে খুঁজে বেড়াবো “হাসিমুখ”-গুলো!
সেদিন তোমার প্রতিটি ফোনকলে, প্রতিটি মধুমাখা সম্বোধনে,
থাকবে না কোন অপূর্ণতা, বেদনার সুর,
তোমার পাঠানো রোমান্টিক ইমোজিগুলো সেদিন
হয়ে উঠবে আরও বেশি প্রাণবন্ত, মন আনন্দে বিভোর।
যেদিন বাস-ট্রাকের হর্ন ট্রেনের হুইসেল মনে হবে
হারানো দিনের গানের মত মধুর।
যেদিন চঞ্চল শৈশবের মত দৌড়ে বারান্দায় যেয়ে-
আকাশে তাকিয়ে ডানা মেলে উড়তে দেখবো বিমান।
ঘরে ফিরে অন্তর্জাল ঘেঁটে-ঘেঁটে তোমায় নিয়ে-
কোন দূর দেশে সাজাবো মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনা।
যেদিন আরেকটি অনিশ্চিত জীবনের শুরু ভেবে-
ফুটে উঠবে প্রভাতের আলো নিত্যদিনের মত,
হঠাৎ অভাবিতভাবে কাঁপা-কাঁপা হাতে-
বিস্ফারিত চোখে সত্য-মিথ্যার-বিবাদ-ভঞ্জনে দেখতে পাবো
“করোনার সফল ভ্যাকসিন আবিষ্কার!”
সেদিন “২৪৪১১৩৯” ডায়াল করে বলবো-
মা-কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো আসছে বসন্তে।
কোভিড পরবর্তী বিশ্বে প্রতিটি দিন উৎসর্গ করবো তোমারই তরে,
প্রতিটি স্নিগ্ধ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে চাই-
প্রিয়তমা তোমারই মুখ।