একটা দেশের মানুষের জীবনের যাপনের মান দেখলে বুঝা যাবে সেই দেশের শিক্ষার মান কেমন। একটা দেশের শিক্ষার মান নির্ভর করবে সেই দেশের কারিকুলাম কেমন। পাঠ্যক্রম কেমন। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পারিয়ে গেলেও আমরা কি বই পড়ব আর কিভাবে উত্তর লিখব তার সার্বজনীনতা কিংবা ফিলসফি সেস্ন নিয়ে দ্বিধান্বিত।
আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এখোনো আইসিটির মত সাবজেকটস মুখস্থ করে। বীজগণিত কি কাজে লাগে জানতে পারছেনা কিংবা জ্যামিতির মত জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয় প্রায়োগিক দিক শিক্ষার্থীরা জানার আগেই মুখস্থ করে।
আমাদের দেশের ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী রিডিং পড়তে জানেনা গনিতে আর সমস্যা। এই রির্পোটটি বিবিসি করেছিল (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯) আমি শিক্ষক হিসেব বলব পরিসংখ্যানটি আর ও বেশি। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এম.এ পাশ করে ও বাংলা ৫০ বর্ণের উচ্চারণ কিংবা ২৬ ইংরেজি বর্ণের উচ্চারণ ঠিকমতো উচ্চারণ কেউই ভাল মতো পারছেনা।
২০২৩ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন শিক্ষা নিশ্চিত করতে কিন্তু এ শ্রেণিকক্ষে আনন্দটা দেবে কে? কিভাবে সেটি নিশ্চিত করতে হবে? ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনি, ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে ১০ বিষয়ে পড়ানো হবে; সেগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে এসব শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়।
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে এ শিক্ষাক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হবে। নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের বিভাজন থাকছেনা। মুখস্থনির্ভর শিক্ষা থেকে সরে এসে অভিজ্ঞতানির্ভর শিক্ষায় প্রাধান্য দেওয়া প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত।
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০শতাংশ, ৪০শতাংশ মূল্যায়ন হবে ক্লাস শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে। যষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ৬০শতাংশ, সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ।নবম দশম শ্রেণিতে কয়েকটি বিষয়ে শিখনকালে অর্ধেক মূল্যায়ন এবং বাকি অর্ধেক সমাষ্টিক মূল্যায়ন হবে। প্রকৃত মুল্যায়ণই হচেছ ’ ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ কারন সামষ্টিক মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের সকল দিক সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনা। এটি জানা সত্ত্বেও বহু দেশে সামষ্টিক মূল্যায়নই চলছে।
পরীক্ষার বিষয় ও পাঠ্যপুস্তকের চাপ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে নতুন কারিকুলামে । শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের মতো কিছুটা সময় কাটাতে পারে তা নিশ্চিত করতেই নতুন কারিকুলাম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কারিকুলামে একটি কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচেছ। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ভাগ শিখনকালীন ও ৭০ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ণ হবে। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা থাকছেনা। এটি আমাদের মূল শিক্ষানীতিতেও নেই। (রেফারেন্স :দৈনিক শিক্ষা)
একটি ভাল বিষয়ে এম.এ পাশ করে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ে। ইংরেজি কিংবা বাংলা বানান মুখস্থ করছে,একটা চাকরি পাবার প্রত্যাশায় আমাদের দেশে লেখা পড়া মানেই একটা সরকারি চাকরি,অন্য যেকোনো চাকরি /কাজ সমাজ স্বীকৃত নই। যা পুরা জাতিকে হতাশ করেছে।
এই সব ভাবনা থেকে পত্রিকাতে জানতে পারলাম কারিকুলামে ব্যাপক পরির্বতনের কথা,কিন্তু আমরা জানিনা বৈশ্বিক শিক্ষার সাথে তাল মিলাতে পারবো কিনা। আমাদের দেশের শিক্ষায় শুধু কলমের লেখার দক্ষতা কে মুল্যায়ন করা হয় যা মুল দক্ষতা যাচাই করা সত্যিই কঠিন।
শিক্ষা মানেই কখনো নৈর্ব্যক্তিক, কখনো ছোট প্রশ্ন,কখনো বড় প্রশ্ন,কখনো সৃজনশীল,কখনো কমিউনিকেটিভ। নকলের বিপরীতে সৃজনশীল পদ্ধতি কিছটা কার্যকর হলে ও এই পদ্ধতির চারটে ধাপ শিক্ষক গন বুঝে উঠতে পারেনি, শিক্ষকরা বাজারের গাইড থেকে প্রশ্ন করেছে। আমাদের দেশের শিক্ষায় শুধু কলমের লেখার দক্ষতা কে মুল্যায়ন করা হয় যা মুল দক্ষতা যাচাই করা সত্যিই কঠিন।
আমাদের দেশে আমাদের নীতিগত গুলো কম্পিউটারের ফল্ডারে আটকে আছে। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠেই গল্প করে ব্রাজিল /আর্জেন্টিনা জিতবে। কিংবা সাকিব আল হাসান টেস্ট দলের অধিনায়ক হচ্ছেন। কোনো শিক্ষার্থীকে দেখিনাই তারা দেশের ইকোনমি নিয়ে কথা বলছে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রাত্যহিক জীবনের যে সরাসরি শিক্ষার ইন্টার রিলেশনশিপ সেটা করতে পারে না। আগামি দশক আমাদের কোন জ্ঞান দরকার হবে তা নিয়ে পাঠ দান দেখা যায়না।
আমাদের খাদ্য আমদানি নির্ভর, প্রযুক্তি আমদানি নির্ভর তৈরি পোশাকরে কাঁচামাল, ঔষুধের কাঁচামাল সবই আমদানি নির্ভর। যমুনা সেতু,কোরিয়া, পদ্দা সেতু চাইনা,ট্রেন লাইন জাপান করে তাহলে আমার শিক্ষার আউটকাম কি? আমাদের শিক্ষা কি কাজে লাগছে?
এম.আমিনুল ইসলাম
শিক্ষক, সাভার ক্যান্টনমেন্ট
প্রগ্রাম টিচার, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভারসিটি।