ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগ হতে স্নাতক শেষ করা স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শাহীন আলম চাকরির দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন । সোমবার (৯ মে) ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনি এই অনশন শুরু করেন। চাকরির নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন বলে, বিডি২৪লাইভ’কে জানিয়েছেন শাহীন আলম। শাহীন বিশ্ববিদ্যালয়টির মাস্টার দা’সূর্য সেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে।।
শাহীনের অভিযোগ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির আবেদন করলেও প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে কোনো চাকরি পাচ্ছেন না। চাকরি যদি নাই হবে তাহলে কেন সরকার লেখাপড়ার সুযোগ দিল, বলে মন্তব্য এ মেধাবী শিক্ষার্থীর। শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের সব শিক্ষিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য একই দাবি তুলেছেন, বলে মনে করেন তিনি।
শাহীন আলম আরো বলেন, সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও চাকরিতে ঢুকতে পারছি না। সংবিধানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর ধারা (১) দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা দিয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বঞ্চিত বা তার প্রতি বৈষম্য করা বা তাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। বিভিন্ন দপ্তরে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অবহেলা ও অর্থের কাছে হার মানতে হচ্ছে। জানা যায়, শাহীন জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন ছিলেন না। জেলার আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার জ্বর হয়। ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে জ্বর সেরে গেল। কিন্তু ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। দৃষ্টি হারিয়ে গেলে কী হবে, থেমে থাকেনি তাঁর পড়ালেখা।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত নড়াইল তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি হন শাহিন। ২০১৩ সালে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে ঝিনাইদহের মহেশপুর সামছুল হুদা খান মহাবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন।
২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর সকল বাঁধা উপেক্ষা করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সুযোগ পান। লেখাপড়ার পাশাপাশি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং নিজ উদ্যোগে ভারত, বাংলাদেশের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।