ইতিহাসের সবচেয়ে থ্রিলিং ফাইটব্যাকে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

0
133

ইতিহাসের সবচেয়ে থ্রিলিং ফাইটব্যাক করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সমীকরণটা কঠিনই ছিলো। কিন্তু এতটা কঠিন হয়ে যাবে তা কারও কল্পনাতেও ছিলো না। ৯০ মিনিট পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৫ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া দলটির সামনে তাই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম সমীকরণ মেলানোর কাজ। ফাইনালের টিকিটি পেতে চাই  ১ মিনিটের মধ্যে ২ টি গোল! সেই সাথে খেলা নিয়ে যেতে হতো লস টাইমে যেখানে জিততে হলে করতে হতো আরও ১টি গোল! পুরো ফুটবল বিশ্বকে হতবাক করে কার্লোস আনচেলোত্তির শিষ্যরা তাই-ই করলো। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু হয়ে থাকলো ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে থ্রিলিং কামব্যাকের স্বাক্ষী।

করিম বেনজামার চোখে জল। আনন্দাশ্রু। কার্লো আনচেলত্তি কাঁদছেন! নিজের হাত দিয়ে মুছছেন সেই জল। মার্সেলো, মড্রিচরা আনন্দের সাগরে ডুবে উদযাপন করছেন। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু তখন উন্মাতাল।

ওদিকে চোখের মণি হয়ে উঠা রদ্রিগোকে ঘিরে জটলা। ক্যামেরার সব ফ্ল্যাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে তাকে। ব্রাজিলিয়ান তরুণ তুর্কী যা করলেন তা চিমটি কেটে বিশ্বাস করাতে হবে! স্রেফ অবিশ্বাস, অকল্পনীয়। মাঠে নেমে চোখের পলকে জোড়া গোল করে নিজ দলকে তুললেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে।

ফাইনালে যেতে ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটিকে আজ শুধু হারানোই নয়, গোলের ব্যবধান বড় থাকা লাগত রিয়াল মাদ্রিদের। প্রথম মুখোমুখিতে ৪-৩ গোলে ম্যাচ হারা রিয়াল আজ সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নেমেছিল। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো রোমাঞ্চকর সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে রিয়াল জিতেছে ৩-১ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের টিকিট পেয়েছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। ২৮ মে প্যারিসের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ লিভারপুল।

আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর ৭৩ মিনিটে সিটি এগিয়ে যায়। আলজেরিয়ান ফরোয়ার্ড রিয়াদ মাহরেজ দারুণ শটে স্বাগতিকদের দুর্গ স্তব্ধ করে দেন। তখন স্কোর লাইন ৫-৩! কি করবে রিয়াল মাদ্রিদ? কে দেখাবে তাদের পথ?

সান্তিয়াগো বার্নাব্যু রিয়াল মাদ্রিদের শুধু পয়মন্ত ভেন্যুই নয়, এখানে মাঠে নামলে শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত লড়াই করে যায় তারা। বেনজামা, ভিনিসিয়াস, মড্রিচরা নিজেদের ডেরায় একছত্র আধিপত্য দেখায় তা প্রমাণ পাওয়া যায় শেষ কয়েক মিনিটের লড়াইয়ে।

৬৮ মিনিটে টনি ক্রজের বদলি হয়ে মাঠে নেমেছিলেন ব্রাজিলিয়ান রদ্রিগো। তার হাত ধরেই ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে সাফল্য পায় স্বাগতিকরা। ৯০ মিনিটে বাঁ দিক থেকে বেনজেমার দারুণ ক্রসে পা ছুঁইয়ে গোল রদ্রিগোর। এক মিনিটের ব্যবধানে কারভাহালের ক্রস থেকে ডি বক্সের ভেতরে থেকে হেড দিয়ে আবার গোল রদ্রিগোর। তাতেই ম্যাচে সমতা পেয়ে যায় রিয়াল। স্কোর লাইন ৫-৫।

চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, স্কোর লাইন সমান হলে ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে। এরপরও নিষ্পত্তি না হলে টাইব্রেকার। কিন্তু অতদূর যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। ৯৫ মিনিটে রুবেন দিয়াস বেনজামাকে বক্সে ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় রিয়াল। হ্যাট্রিকের হাতছানি থাকলেও রদ্রিগো বেনজামার হাতে তুলে দেন বল। স্পট কিক থেকে পাওয়া গোলের সহজ সুযোগটি হাতছাড়া করেননি রিয়াল মাদ্রিদের সুপারস্টার। বল জালে জড়িয়ে বেনজামা সিটিকে ধরিয়ে দেন রিটার্ন টিকিট!

এবার স্কোর লাইন ৬-৫। শেষ পর্যন্ত এই স্কোর লাইনে ম্যাচ জিতে অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে গল্প লিখে চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে সফলতম ক্লাবটি। দুই লেগ মিলিয়ে মোট পাঁচবার সিটির কাছে পিছিয়ে পড়েছিল রিয়াল। প্রত্যেকবার ফিরে এসে অসাধারণ গল্প লিখে আনচেলত্তির শিষ্যরা।

অবশ্য এবার ইউরোপ সেরার মঞ্চে বারবারই প্রত্যাবর্তনের অবিশ্বাস্য ছবি আঁকছে রিয়াল। পিএসজির মাঠে শেষ ষোলোতে হারের পর বার্নাব্যুতে তারা ঘুরে দাঁড়ায় এবং কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে। অন্যদিকে চেলসির মাঠে শেষ আটের প্রথম লেগ জিতলেও ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে বিপদে পড়েছিল রিয়াল। কিন্তু শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ায় এবং অতিরিক্ত সময়ের গোলে নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল।

এবার দানে দানে তিন দান! ঘুরে দাঁড়ানোর, ফিরে আসার ধ্রুপদী কাব্য রচনা করে শিরোপায় চুমু দেওয়া থেকে মাত্র এক পা দূরে দাঁড়িয়ে রিয়াল। এমন অলৌকিক ফিরে আসার পর বিশ্বাস করতে বাকি থাকে না, বার্নাব্যুতে ৯০ মিনিট অনেক লম্বা সময়! ম্যানচেস্টার সিটি আজ হারে হারে টের পেয়েছে! পুরোটা সময় নয় অবশ্য। ৯০ থেকে ৯৫ মিনিট…রিয়ালের ৫ মিনিটের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড সিটি দুর্গ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here