মানুষ নতুন কবিদের চিনে না কেনো? লোকে সময়সাময়িক কবিতাবিমুখ কেনো? কবিতা কি তাহলে মানুষের ভাব-ভাষাকে ধারণ করছে না? কবিতা সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এ কারণে ‘কবি’ সবচেয়ে বড় পরিচয়। রবীন্দ্রনাথ ,নজরুল বা মধুসূদন অন্য যা-ই লিখুক তাদের কবিসত্তা বড়। মানুষ তাঁদেরকে কবি হিসেবে চিনে। কালেরগর্ভে কবি হিসেবে টিকে থাকা কঠিন। পঞ্চপাণ্ডবের পর কবিতার আঙ্গিক পরিবর্তনের কারণে পাঠক কবিতাবিমুখ। পাঠকের মূল অভিযোগ কবিতা দুর্বোধ্য। এ অভিযোগ অবশ্য পঞ্চপাণ্ডবের বিরুদ্ধেও ছিল।
যার কারণে জীবনানন্দ,বিষ্ণু দে, সুধীন দত্তরা জীবদ্দশায় বর্তমানের মতো খ্যাতি পাননি। আধুনিক কবি ও কবিতা আবিষ্কারের বিষয়। এ আবিষ্কার লেখকের জীবদ্দশায় হওয়ার সুযোগ কম। তবে হেলাল হাফিজ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তাঁর ভাষায় সারল্য, বাক্যে চমৎকারিত্ব ও যুগলের প্রাণের আকুতি চেনা সুরে বেজে উঠে। তাই তিনি অল্পেই বহুল চর্চিত। তাঁর সঙ্গে মহাদেব সাহাকেও মেলানো যায়। কিন্তু মহাদেব সাহা লিখেছেন প্রচুর। অপরদিকে নির্মলেন্দু গুণ , সৈয়দ হক , শামসুর রাহমান, আল মাহমুদরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হয়েছেন।
তাদের কবিতার উপাদান সমাজ, রাষ্ট্র ও ইতিহাসঘেঁষা। ফলে রাজনীতির মিছিলেও তারা চর্চিত। এ ক্ষেত্রে হেলাল হাফিজকেও অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। কিন্তু সেটা ক্ষীণমাত্রায়। 2000সালের পর থেকে জনপ্রিয় কবিতার কবি খুব কম। ইমতিয়াজ মাহমুদ ,কামরুজ্জামান কামু, সাইয়্যেদ জামিল, সোহেল হাসান গালিব,জহির রায়হান, শাহীন রেজা রাসেল,আলমগীর শাহরিয়ার কিছুটা চমক সৃষ্টি করেছেন।ছড়াকার হিসেবে আখতারুজ্জাম আজাদও পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন।
তিনি প্রবন্ধে তীর্যক ভাষা ব্যবহার করে এক শ্রেণির পাঠকের নজর কেড়েছেন কিন্তু কবি হিসেবে ভারিক্কি কম। ব্রাত্য রাইসু কবি হতে গিয়ে বুদ্ধিজীবী হয়ে গেছেন। এখন তিনি সার্টিফিকেটের দোকান দিয়েছেন। সাহিত্যের সার্টিফিকেট বিক্রি করেন। মোস্তফা হামেদী, হাসান রোবায়েতরা হেঁটেছেন পঞ্চপাণ্ডবদের পথে। অনুভূতি প্রকাশে নতুন শব্দ নির্মাণে তারা কেউ কেউ মধুসূদনকে অনুসরণ করেছেন, কেউ আবার জীবনানন্দে বুঁদ হয়ে আছেন। মোস্তফা হামেদী ও হাসান রোবায়েত এ ঘোরে আছেন। তবে এ কৌশলে কবিতা ভারী হয়।দমকা হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
তাদের অগ্রগতি তাই জীবনান্দের মতো ধীর-স্থির। আর মারজুক রাসেলরা গালাগালি করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। এটা বাজারি কবির বৈশিষ্ট্য। এরা আবার দমকা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। বর্তমানের কবিরা শব্দের শৃঙ্খলে কবিতাকে অবরুদ্ধ করেছেন। তাদের বক্তব্য হল পাঠককেও বৌদ্ধিক হতে হবে। এ কারণে পাঠক কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পাঠোদ্ধার করার মতো সময় ও ধৈর্য পাঠকের নেই। কবি ও পাঠকের এ বিপরীত যাত্রায় কবিতা এখন ম্রিয়মান!