এ যেন ক্রিকেট মাঠের নাটকীয়তাকেও হার মানালো। তীরে এসে তরী ডুবে গেল পাকিস্তানের ৯২-এর বিশ্বকাপ জয়ী কাপ্তানের। মাত্র ২ ভোটের আক্ষেপে পুড়ে বিদায় নিয়েছেন ইমরান খান। দিনভর নানা নাটকীয়তা শেষেও নিজের পতন ঠেকাতে পারেননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রোববার (১০ এপ্রিল) প্রথম প্রহরে পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি। এর মাধ্যমে ইমরান খানের ১ হাজার ৩৩২ দিনের প্রধানমন্ত্রীত্বের অবসান ঘটলো।
অনাস্থা ভোটে হেরে গেলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিছুক্ষণ আগে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ইমরানের বিপক্ষে ১৭৪ ভোট পড়েছে। ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে ইমরানকে ঠেকাতে প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোট। পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরানই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিলেন।
২০১৮ সালের ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জিতে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসে পাকিস্তান তেহেরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। নির্বাচনে তারা ১৪৯ আসনে জয় হয়।কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করতে না পারায় সে সময় পাকিস্তান মুসলিম লীগ- কিউ (পিএমএল-কিউ), মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম-পি) এবং বিএপি নামের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করেন।
ইমরান খান ১৮ আগস্ট ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১০ এপ্রিল ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়। যার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের ক্ষমতার অবসান ঘটে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে অনাস্থা প্রস্তাব পর্যন্ত ইমরান খান ১ হাজার ৩৩২ দিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান সরকারকে নেতৃত্ব দেন। মূলত ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান পাকিস্তানকে ৩ বছর ৭ মাস ২৩ দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এর আগে চলতি মাসের ৩ তারিখ পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনে। তবে সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি জানিয়ে দেন, বিরোধীদের আনা প্রস্তাব আসলে ‘বিদেশি চক্রান্ত।’ ডেপুটি স্পিকারের এই পদক্ষেপের পরপর ইমরান খানের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন। ডেপুটি স্পিকারের দেওয়া ওই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। টানা চার দিন চরম নাটকীয়তার পর বৃহস্পতিবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের অধিবেশন শুরু হয় পার্লামেন্টে। কিছুক্ষণ পর স্পিকার আসাদ কায়সার অধিবেশন মূলতবির সিদ্ধান্ত নেন। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে অধিবেশন পুনরায় শুরু হয়। পরে জানানো হয়, ইফতারের বিরতির পর রাত ৮টার দিকে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে। ইমরান খানের অনুগত হিসেবে পরিচিত স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অনাস্থা প্রস্তাবের ভোট থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে রাতেই পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের আগে অধিবেশনের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর এমপি আয়াজ সাদিকের কাছে ন্যাস্ত করেন আসাদ কায়সার। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ০২ মিনিটে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর অধিবেশন শুরু হয়