দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলংকা। ২০০৯ সালে তামিলদের পতনের পর থেকে পর্যটনের উপর ভিত্তি করে ভালোই এগিয়ে চলছিল দেশটি।গড়ে তুলেছিল উন্নয়নের মডারেট অর্থনৈতিক ভিত্তিও। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই নাজুক হয়েছে যে, দেশ জুড়ে চলছে তীব্র খাদ্য ও জালানী সংকট,ফুঁসে ওঠা ১৫ শতাংশের মুদ্রাস্ফিতি ও দ্রব্যমূলের ঊর্ধগতি। বৈদেশিক বিনিয়োগ ভিত্তিক অর্থনীতির বদলে বৈদেশিক ঋণ ভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নেমে আসে ধস। যার পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ২.৩৬ বিলিয়ন ডলারে।জাতীয় আয়ের তৃতীয় বৃহত্তম খাত ছিল দেশটির পর্যটন শিল্প।
কিন্তু করোনাকালীন দেশটিতে পর্যটন শিল্পেও ব্যাপক ধ্বস নেমে আসে। পর্যটন খাত থেকে দেশটি আয় ছিল না বলেই চলে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমায় সকল প্রকার আমদানিতে নেমে আসে অন্ধকার।আর মুদ্রার অবমূল্যায়নেয়র দিকটিতো রয়েছেই।স্বভাবতই এহেন পরিস্থিতিতে সরকার নিত্যব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী আমদানি না করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অবস্থা জনগনের ধৈয্যের বাহিরে চলে যাওয়ায় রাস্তায় নেমে পড়েছে সব শ্রেনীর-পেশার মানুষ। বর্তমানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলছে দেশটির সর্বত্র। শ্রীলংকার জনগন বলছে বর্তমান সরকারই এ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। পরিস্থিতির চাপে ইতোমধ্যে মন্ত্রীসভা থেকে অনেকই পদত্যাগ করেছে। পদত্যাগ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণরও। এখন শুধু সরকার বিরোধী বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের অপেক্ষা।
যদিও প্রেসিডেন্ট নতুন মন্ত্রীসভায় বিরোধীর নিয়ে দলমত নির্বিশেষে নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠনের আহবানও করে যাচ্ছেন কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি একটাই এবং তা হলো প্রেসিডেন্টর ক্ষমতা হতে অপসারণ।পরিবারতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম,দুর্নীতি,পরিকল্পণাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য স্বয়ং প্রেসিডেন্টকেই দায়ী করছে বিক্ষোভকারীরা।তাই দেশটিতে অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে একমাত্র প্রেসিডেন্টের পদত্যাগই তাদের বর্তমান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।দেশটিতে জরুরী অবস্থা জারি করলেও কার্যত কোন ফল আসেনি।জনগন রাস্তায় নেমে প্রেসিডেন্ট এর পদত্যাগের দাবিতে গো গোতা গো ধ্বনি তুলছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বলা যায়, প্রেসিডেন্ট এর পদত্যাগ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন হস্তক্ষেপে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান হবে বলে মনে হচ্ছে না।শ্রীলংকার বর্তমান নাজুক এবং ভঙ্গুর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দরুন অনেক দেশই নড়েচড়ে বসেছে এবং তারা নিজেরাও সতর্ক অবস্থা রয়েছে।
দেশটি বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণ খোঁজে মোটাদাগে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ঋণ নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা।শ্রীলংকা অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে লাগামহীনভাবে ঋণ নিয়েছে।অপরিকল্পিত এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার দরুন এসব ঋণের অর্থ সঠিক ও পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজে লাগাতে পারে নি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় আয়ে অর্থ জোগান হবে এমন খাত চিহ্নিত করে ঋণের ব্যয় ব্যবস্থাপনা করা হয়নি। তাই চীন এবং ভারতের ঋণের দেনায় পড়েছে দেশটি।মোট ঋণের ১০ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে। বাকীটা ভারত এবং বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া। শ্রীলংকা উচ্চাবিলাশী কতিপয় মেগা প্রজেক্ট নিয়ে এগুতে চেয়েছিল।
অপরিকল্পিত এসব উন্নয়ন মেগা প্রজেক্ট এর দরুণ দেশটিতে আয়ের চেয়ে ব্যয় চরম মাত্রায় বেশি এবং চোখে পড়ার মতো পার্থক্য দেখা দেয়।ফলে উপায়ান্তর না পেয়ে সরকার সার্বভৌম বন্ড ইস্যু করে আন্তর্জাতিক পুজি বাজার থেকে অর্থের যোগানে ভারসাম্যতা নিয়ে আসার চেষ্টা করে।কিন্তু বন্ড ইস্যুর জন্য ভবিষ্যতে ঋণের অর্থ কিভাবে জোগাড় করা হবে তারও কোন চিন্তভাবনা করেনি।অর্থাৎ যখন যে সরকার যে পরিস্থিতিতে পরেছে,তখন কেবল সে পরিস্থিতি থেকে উদ্বারে চেষ্টা করে পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির ভবিষ্যত অর্থনীতি কোন দিকে যাবে সেদিকে কেউই খেয়াল রাখেনি।
সমুদ্রবন্দর,বিমানবন্দর,সমুদ্রতীরে স্থাপনা,বাতি সমৃদ্ধ রাস্তাঘাটের নামে উচ্চাবিলাসী প্রজেক্টে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করা হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলখাত উপেক্ষিত হয়ে পড়ে।বিশেষকরে কৃষিখাত উৎপাদনমুখী না হওয়ায় বর্তমানে বৈদেশিক রিজার্ভ সংকটের দরুন আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে অত্যাবশকীয় খাবারও জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।দেশটিতে জ্বালানী সংকটের দরুন বিদুৎ ঘাটতি চরমে উঠে গেছে।দিনে প্রায় ১৪-১৫ ঘন্টা বিদুৎহীন থাকতে হচ্ছে দেশের জনসাধারণকে। জনজীবনে এসব বিপর্যস্ততা দেশটির সার্বিক পরিবেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে।
শ্রীলংকার পর্যটন খাত থেকে মোট আয় ছিল অর্থনীতির প্রায় ১২ শতাংশ।কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধের দরুন এ খাতের আয় প্রায় ৯০ শতাংশের মতো কমে যায়।যা ছিল অর্থনীতির উপর এক মারাত্মক ধাক্কা। এর সাথে যোগ হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। কেননা ইউক্রেন যুদ্ধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়ছে।তাই বাদ যায় নি আমদানি নির্ভর শ্রীলংকার অর্থনীতিও।
বৈদেশিক রেমিটেন্স বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের সক্রিয় হাতিয়ার।তাই উন্নয়নশীল দেশের ন্যায় শ্রীলংকারও বৈদেশিক রেমিটেন্স থেকে উল্লেখ্যযোগ্য আয় আসতো।কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি দরুন বিদেশে অবস্থানরত কর্মীদের রেমিটেন্স প্রেরণের হার উল্লেখ করার মতো কমে যায়। দেশটিতে জ্বালানী তীব্র সংকটের দরুণ বিদুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে পারছে না।অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।ফলে খাদ্য এবং নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে।
বর্তমান ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলা যায় অভ্যন্তরীণ উৎস হতে কর প্রত্যাহার।প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে ২০১৯ সালে অভ্যন্তরীণ উৎসে হতে আয়কর প্রত্যাহার করেন। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয় প্রায় এক চতুর্থাংশ হ্রাস পায়।আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি দেখা দেয়ায় অর্থনৈতিক ঘাটতি মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হয়েছে দেশটিকে।
প্রশ্ন হলো, এহেন টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে দেশটি? এতে বলা যায়,বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট পুনরুদ্ধারে প্রথমেই প্রয়োজন পড়বে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।বর্তমানে দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাক্তিকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হবে।তবে এটিও মাথায় রাখতে হবে,রাজনৈতিক উত্তোরণের পথ যাতে দীর্ঘতর না হয়ে পড়ে। কেননা বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কেবল প্রেসিডেন্টকে দায়ী করে আন্দোলন অব্যাহত ও দীর্ঘায়িত করলে পরিস্থিতি আরোও শোচনীয় হবে বৈ উন্নতি হবে না।আর নতুন সরকার গঠন নিয়ে সময় অপচয় করাও সমীচীন হবে না।এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ এবং দীর্ঘায়িত হবে।তাই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের সাথে সমন্বয় করে হলেও গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তিকে নিয়ে সরকার গঠন করাই হবে দেশটির অর্থনৈতিক পুর্নগঠনের প্রথম কাজ।এমনকি সরকার গঠনে দীর্ঘসূত্রিতার ঝুঁকি মোকাবেলায় বর্তমান প্রেসিডেন্টকেও সুযোগ দেয়া যেতে পারে।সাধারণ জনগনকেও বুঝতে হবে বর্তমান অর্থনৈতিক দূরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।তাই নতুন করে গ্রহনযোগ্য সরকার গঠন করে হউক বা বর্তমান মন্ত্রীসভা পুর্নগঠন করে হউক খুব দ্রুত পরিস্থিতি উন্নয়ন করে ঋণদাতা দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে বৈদেশিক ঋণ পুর্নগঠন করতে হবে।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে সমন্বয় করে এ মর্হূতে কাজ করতে হবে।একটি অনুকূল এবং পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক একটি ঋণ কাঠামো উন্নয়নে আইএমএফ-এর সহায়তার পদক্ষেপ নিতে হবে।তবে এটাও ঠিক, বর্তমান অস্তিথিশীল পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আইএমএফ এমনকি দাতা দেশগুলো দেশটির সাথে লেনদেনে সহায়তা করতে সক্ষম হবে না।
অবশ্য প্রথমে শ্রীলংকার উচিত হবে অভ্যন্তরীণ ঋণ পুর্নগঠনের চেয়ে বৈদেশিক ঋণ পুর্নগঠনে জোর দেয়।দেশের ঘাটতি বাজেট মোকাবেলা করতেই ব্যাংক খাত ঋণ সরবরাহ করে আসছিল।তাই ব্যাংক খাতের নতুন করে অস্থিরতা মোকাবেলায়ই এটি করতে হবে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।তাই বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যতা নিয়ে আসতে হবে।
সংকট উত্তরণে এ মুহূর্তে আরেকটি কাজ হবে দেশের বাজেটে একটি উদ্বৃত্ত তৈরি করা।কেননা দেশটিতে আর্থিক খাতে সামঞ্জসতার অভাব রযেছে।তাই সরকারের উ”চবিলাসী মেগা প্রজেক্টের দরুন এবং ২০০৯ সালে অভ্যন্তরীণ কর হার কমানোর ফলে দেশটির সরকারকে চরম ঘাটতি বাজেট মোকাবেলা করতে হয়।কিš‘ কর হার হ্রাস করে সরকারের ভবিষ্যত আর্থিক খাত কিভাবে শক্তিশালী করা হবে বা ভবিষ্যত অদ্ভূত অর্থনৈতিক ঝুঁকি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সে বিষয়টি মোটেও বিবেচনায় নেয়া হয়নি।এটি এক প্রকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট এর অদূরদর্শীতারই প্রতিফলন বলতে হবে।অবশ্য এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার আগের সরকারের নীতি অনুসরণ করেছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক স্তিতিশীলতার স্বার্থে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দেশটির ধনী শ্রেণীর উপর করের বোঝা বাড়াতে হবে।অবশ্য ধনী শ্রেনীর উচিত হবে এ মূহুর্তে দেশের স্বার্থে তাদের এগিয়ে আসা।কেননা দেশটি আর্থিক মুক্তি লাভ করতে হলে তাদের সরকারের সাথে একসাথে কাজ করতে হবে। পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে সরকার ভবিষ্যতে তাদের ক্ষেত্র বিশেষে অতিরিক্ত সুবিধা দিবে এমন প্রতিশ্রুতিও করা যেতে পারে। বিলাসী মেগা প্রকল্পগুলো আবশ্যিকভাবে আপাদত বন্ধ রাখতে হবে। সরকারের উচিত হবে প্রথমে সাধারণ জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে কার্যক্রম জোরদার করা।পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাধারণ জনগনের স্বার্থে সরকারি বেতন খাত থেকে একটি অংশ মাসিক ভিত্তিতে নিয়ে নগদ সহায়তার কাজে লাগাতে পারে। এক্ষেত্রে আপদকালীন সহায়তা হিসেবে সাধারণ জনগনের জন্য নগদ মুদ্রা বিতরণে বাংলাদেশের মডেল গ্রহন করতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি দাতা দেশগুলোর সাথে ঋণ কাঠামো পুর্নবিন্যাসের কোন বিকল্প নেই।কেননা দেশটিতে বর্তমানে রয়েছে মাত্র আড়াই বিলিয়ন ডলারেরও কম বৈদেশিক রির্জাভ।এর মধ্যে চলতি বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধের চাপতো রয়েছেই।যেটিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।তাই এক্ষেত্রে দাতাদের সাথে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে। শ্রীলংকার উচিত হবে বড় ঋণদাতা চীন- ভারত এবং বহুপাক্ষিক ঋণদানকারী সংস্থা এডিবি,জাইকা,বিশ্বব্যাংক,আইএমএফ এর সাথে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করে উৎপাদনশীল খাতে বিনোয়োগ ক্ষেত্র সৃষ্টি করে ঋণ কাঠামো পুর্নবিন্যাস করা। উৎপাদনশীল খাতে জোর দিয়ে বিনিয়োগ করলে চলমান খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করে আমদানি নির্ভরতা কমানো যাবে।প্রায় ২.৫০ কোটি জনসংখ্যার দেশে এ পদ্বতি অবলম্বন করে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় সফলতা আসবে বলে প্রত্যাশা করাই যায়। এতে মৌলিক চাহিদার জন্য জনমনে যে অস্থিরতা কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে।
সর্বোপরি বলা যায়,শ্রীলংকার বর্তমান এ পরিস্থিতির জন্য দেশটির কোন একক সরকারকে দায়ী করা যাবে ঠিক হবে না।কেননা যে সরকারই এসেছে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের বদলে নির্বিচারে বৈদেশিক ঋণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।গড়ে তুলেছে বিভিন্ন উ”চ বিলাসী মেগা প্রজেক্ট।যেসব প্রজেক্ট বাস্তবায়নেও ছিল না কোন স্ব”ছতা।ফলে ফুরিয়ে আসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে দেশটিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে দেশের আর্থিক খাতকে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর জোর দিয়ে বিদুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।অভ্যন্তরীণ আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা আনয়নে কার্যকর ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।ঘাটতি বাজেট মোকাবেলা করতে প্রাথমিক উদ্বৃত্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। অভ্যন্তরীণ আয়কর বাড়াতে হবে।বর্তমান পরিস্থিতি উন্নয়নে সর্বাগ্রে দেশটির বিলাসী প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই স্থগিত রাখতে হবে।দ্রæত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন করে বৈদেশিক ঋণদাতাদের সাথে বসে ঋণ পুর্নগঠনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।বহুপাক্ষিক ঋণ দানকারী সংস্থা আইএমএফ,বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভলাভমেন্ট ব্যাংক এর সাথে পরিস্থিতি উন্নয়নে বর্ধিত সময়ের জন্য ঋণের সুদহার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।দেশে বিনিয়োগ বান্ধব অর্থনীতির উপর জোর দিতে হবে।তবে সব কিছুর পূর্বশর্ত হবে দ্রুত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা।অন্যথায় দেশটির জন্য দেউলিয়াত্বের ঝুঁকি উড়িয়ে দেয়া যাবে না।
লেখক: কলামিস্ট ও সাবেক গনমাধ্যমকর্মী
[email protected]