এ মাসেই কালবৈশাখী, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার শঙ্কা

0
19

দেশের বিরাট অঞ্চল জুড়ে কার্যত এখন খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে খেয়ালি হয়ে উঠেছে আবহাওয়া। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশের আবহাওয়া অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এখন যে বৃষ্টি হওয়ার কথা সেটি হচ্ছে না। ফলে টানা বৃষ্টি কিংবা টানা খরা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি এপ্রিল হতে পারে দুর্যোগের ঘনঘটার মাস। এ মাসে তীব্র কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা দেখা দিতে পারে। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। তাপমাত্রার পারদ ছুঁতে পারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এপ্রিল মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে দুই-তিন দিন বজ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া মাঝারি বা প্রচণ্ড কালবৈশাখী এবং দেশের অন্যান্য জায়গায় তিন থেকে পাঁচ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা বা মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী হতে পারে। এতে আরো জানানো হয়, এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও দুই থেকে তিনটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি থাকতে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।

এর বাইরে এ মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আবার দেশের কয়েক জেলায় স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। মার্চে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ  মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এপ্রিল মাস এমনিতেই কিছুটা উত্তপ্ত থাকে। এ সময় মৃদু ও মাঝারি, আবার কখনো উচ্চ তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এবার এ মাসে দুই থেকে তিনটি মৃদু বা মাঝারি তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে। বিশেষজ্ঞ আজিজুর রহমান জানান, মার্চ মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পুবালি বায়ুপ্রবাহের সংযোগ ঘটায় ২৪ ও ২৬ থেকে ৩১ মার্চ সময়ে সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় ১৫ থেকে ২০, ২৩ থেকে ২৮ মার্চ সময়ে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ১৯ মার্চ, রাজশাহীতে রেকর্ড করা হয়।

আগামী ছয় দিন গড়ে দৈনিক উজ্জ্বল সূর্যকিরণ থাকবে প্রায় ৯ ঘণ্টা। তবে মাঝে মধ্যে থাকবে অস্থায়ীভাবে হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত। ফলে ভ্যাপসা গরম বাড়তে পারে। এক পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ কাওসার পারভীন জানিয়েছেন, আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দৈনিক উজ্জ্বল সূর্যকিরণ থাকবে ৭ ঘণ্টা ৫০ মিনিট থেকে ৮ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। এছাড়া দৈনিক গড় বাষ্পীভবন হবে সর্বোচ্চ ৪ মিলিমিটার। এ সময় সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের অনেক স্থানে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু স্থানে এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক স্থানে অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হাল্কা (৪ থেকে ১০ মিলিমিটার) থেকে মাঝারি (১১ থেকে ২২ মিলিমিটার) ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি (১১ থেকে ২২ মিলিমিটার) থেকে মাঝারি (২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার) ধরনের ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here