বরগুনা বিএনপির নেতা যুবলীগের সহসভাপতি

0
12

বরগুনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেযেছেন বিএনপি নেতা। নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করা নেতার নামও কমিটিতে থাকায় এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। সোমবার সকালে ঘোষিত এ কমিটির সহসভাপতি পদে স্থান পাওয়া জাহিদুল করিম বাবু বরগুনা শহর বিএনপির সদস্য।

অপর নেতা ঘোষিত যুবলীগের জনশক্তি ও কর্মসংস্থান সম্পাদক অ্যাডভোকেট তানভির আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি ২০২১ সালে ২১ জুন নৌকার বিপক্ষে গৌরীচন্না ইউনিয়নে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থী আবদুল কুদ্দুসকে হারান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৬ বছর পরে গত ২১ ডিসেম্বর বরগুনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটি আগ্রহী নেতাদের বায়োডাটা সংগ্রহ করে। জাহিদুল করিম বাবু তথ্য গোপন করে বায়োডাটা জমা দেয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়। জাহিদুল করিম বাবু কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে তথ্য জমা দিয়েছে, সেখানে উল্লেখ করেছে জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহিদুল করিম বাবু জেলা যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক ছিলেন না। তিনি বিএনপির নেতা। এ ছাড়া বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং যুবক নামে একটি সংগঠনের গ্রাহকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে জাহিদুল করিম বাবুর বিরুদ্ধে। অর্থ আত্মসাতের মামলায় দীর্ঘদিন জেলও খেটেছেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে শিবিরের ইনসাফ নামের একটি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। আদালত তথ্য না জেনে জাল কাগজ ও নথিপত্রের ভিত্তিতে ৫৬ স্কুল জাতীয়করণের আদেশ দেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে জাল-জালিয়াতি তথ্য বেরিয়ে আসে। ইনসাফ এনজিওর শিক্ষা প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জাহিদুল করিম বাবু। এ জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন জাহিদুল করিম বাবু।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান জেলার সিনিয়র সহসভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, জাহিদুল করিম বাবু বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিল। একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে বাবুর সরাসরি অংশ গ্রহণ ছিল। এ জন্য তাকে ২০১৫ সালের ২৯ আগস্ট ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদিত কমিটির বরগুনা শহর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ১২ নম্বর সদস্য করেছিলাম।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তারিকুজ্জান টিটু বলেন, মো. জাহিদুল করিম বাবুর সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আমরা এক সঙ্গে মিছিল মিটিং এবং সমাবেশ করেছি।

জাহিদুল করিম বাবু শ্রমিক দলের রাজনীতি করত বলেও জানান তিনি।

শ্রমিক দলের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, জাহিদুল করিম বাবুর সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তার আসা-যাওয়া ছিল।

জেলা তাঁতী দলের সভাপতি আবুল বাশার রিয়াজ বলেন, জাহিদুল ইসলাম বাবু জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তী সময় এ পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামান জামাল বলেন, জাহিদুল করিম বাবু যুবলীগে পদ পাওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। বাবু কয়েক বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বিএনটির জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি করে এখন জেলা যুবলীগের নেতা। বরগুনায় যুবক নামে একটি এনজিও ছিল। জেলার দায়িত্বে থেকে অসংখ্য গ্রাহকের অর্থ লুটপাটের মহানায়ক ছিল বাবু। অর্থ লুটপাটের কারণে তিনি দীর্ঘদিন জেলহাজতে ছিলেন। এ ছাড়া বাবু বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতা। ত্যাগীদের বঞ্চিত করে এমন একজন বিএনপি নেতাকে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি করা অত্যন্ত দুঃখজনক। আশা করি কেন্দ্রীয় যুবলীগ এই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা বলেন, জাহিদুল করিম বাবু ২০০৬ সালে শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর পর ২০০৭ সালে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। তাকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করি।

এ বিষয়ে জাহিদুল করিম বাবু বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। তথ্য গোপন করে বায়োডাটা জমা দেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে ব্যস্ততার কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

যুবলীগের নতুন পদ পাওয়া জনশক্তি ও কর্মসংস্থান সম্পাদক অ্যাডভোকেট তানভির আহমেদ সিদ্দিকী। তার বায়োডাটায় দেখা যায় শিক্ষা সম্পাদক। কোন কমিটির শিক্ষা সম্পাদক সেই তথ্য কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশিত তথ্যে পাওয়া যায়নি। তবে ২০২১ সালে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থী আবদুল কুদ্দুসের বিপক্ষে দুইবার নির্বাচন করেন। এ ছাড়া তানভির আহমেদ সিদ্দিকীর বড় ভাই মনিরুল ইসলাম বরগুনা সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ অলির বিপক্ষে স্বতন্দ্র চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন।

এ বিষয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ঘোষিত কমিটির কারও বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে তা হলে আমরা তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখব। তদন্তে যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তা হলে আমরা তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here