আধুনিক সভ্যতায় গা ভাসাতে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আধিবাসী গোষ্ঠী। হারিয়ে গেছে অতীতের অন্ধকারে। এভাবেই পৃথিবী থেকে মুছে গেল আরো একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব। চলে গেলেন ব্রাজিল আমাজনে বসবাসকারী জুমা উপজাতীর শেষ পুরুষ আরুকি। সম্প্রতি কোভিড-এ আক্রান্ত হওয়ার পর মারা যান তিনি। তবে ‘জুমা’ সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন তার নাতি-নাতনিরা।
ব্রাজিলের আমাজনের পাশে বয়ে যাওয়া মুকুইম নদীর তীরে বসবাস এই জাতির। জুমা আরার, কাগওয়াহিবম, কাগওয়াহিফ, কাগওয়াহিভ, কাভাহিভা, কাওয়াহীপ, কাওয়াইব এবং ইউমির নামেও পরিচিত। দক্ষিণ ব্রাজিলের অ্যামাজনাস প্রদেশে গভীর জঙ্গলে ‘সাম্রাজ্য’ ছিল জুমা উপজাতির। মৎস্য ও অন্যান্য শিকারের ওপর নির্ভর করেই মূলত দিনযাপন করতেন তারা। বিশ শতকের শুরুর দিক থেকেই বিশ্ব জুড়ে হঠাৎ বৃদ্ধি পায় রাবারের চাহিদা। গোটা জুমা অঞ্চলজুড়ে যে ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর রাবার গাছ, তা নজরে আসতে দেরি হয়নি ট্যাপারদের। আর তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ। চলতে থাকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া। তবে চুপ ছিলেন না তাঁরাও। বেছে নিয়েছিলেন সশস্ত্র আন্দোলনের পথ। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে কী পেরে উঠতে পারে প্রাচীন অস্ত্র? পারেওনি।
জুমা গোষ্ঠীর শেষ মানুষ ছিলেন আরুকিএকাধিকবার গণহত্যার ছায়া নেমে এসেছিল জুমা গ্রামগুলোতে। আর তাদের অস্তিত্বে শেষ পেরেক পুঁতেছিল মারাত্মক এক সংক্রামক রোগ। যা ইচ্ছাকৃতভাবেই ছড়িয়েছিল রাবার ট্যাপাররা। কোনোমতে সেখান থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন আরুকি।
বর্তমানে তার বয়স কত হতে পারে, এ ব্যাপারে সঠিকভাবে কোনো তথ্যই নথিভুক্ত নেই। আনুমানিক ৮৬ থেকে ৯০ বছর বয়স হয়েছিল তার। জীবদ্দশায় গোটা জুমা গোষ্ঠীর পতন এবং ‘সভ্য’ মানুষের হিংস্রতার সাক্ষী থেকেছেন আরুকি। দেখেছেন ‘সভ্যতা’ কীভাবে নিজের স্বার্থে মুছে দিতে পারে একটা গোটা জনগোষ্ঠীকে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে যখন তিনি কিশোর, সেইসময় এই জনজাতির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার। ১৯৯০ সালে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মাত্র ৬ জনে। শুধুমাত্র নিজের পরিবারকেই বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন আরুকি।
বিশ শতকেও এই জাতির লোকসংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজারনব্বইয়ের দশকের পর থেকে কেবলমাত্র তিনিই ছিলেন জুমা সম্প্রদায়ের একমাত্র পুরুষ। আর বর্তমানে এই জনগোষ্ঠীর একমাত্র সদস্যও ছিলেন তিনিই। আরুকির তিন কন্যা থাকলেও তাদের বিবাহ হয়েছিল ‘উরু-ইউ-ওয়া-ওয়াউ’ জনগোষ্ঠীর পুরুষদের সঙ্গে। কারণ ততদিনে মুছে গেছে জুমাদের অধিকাংশ অস্তিত্বই। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তারা এখন আর জুমা জনজাতির অংশ নন। আরুকির নাতি-নাতনিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য একই বিষয়। তারাও জন্মগতভাবে অংশীদার বাবার গোষ্ঠীর।
তবে জুমা ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে অভিনব পন্থা নিয়েছেন তারা। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘উরু-ইউ-ওয়া-ওয়াউ’ এবং জুমা উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ হিসেবেই তারা পরিচয় দেবেন নিজেদের। ইতিমধ্যেই নামের মধ্যেও ‘জুমা’ উপাধি জুড়েছেন আরুকির তিন নাতি-নাতনিই। আরুকির মৃত্যুর জন্য সরকারের অক্ষমতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন বিজ্ঞরা। তার বক্তব্য, আরুকির নিঃসঙ্গ বসবাসের পরে তার কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ছিল না বললেই চলে। কিন্তু জুমা গ্রামে এখনও অনুপ্রবেশ করছেন বহু ব্যক্তি, পাশাপাশি সরকারি কোনো আধিকারিকদের পাঠানোর আগে তাদেরও উপযুক্ত পরীক্ষা ও পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেয়ার দরকার ছিল সরকারের। সেই পথ দিয়েই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস।
আরুকি নিজেই একটি জুমা লংহাউসব্রাজিল সরকারের মতে, এখনও পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন মোট ৫৭২ জন উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষ। তবে একটি স্বাধীন আদিবাসী সংস্থার পরিসংখ্যানে সংখ্যাটা এর প্রায় দ্বিগুণ। আর কোভিডের শিকার হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তিই প্রবীণ। বিষয় হল তাদের মৃত্যুতে যেন আরও শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে এই সংস্কৃতিগুলো। কেন না, তারাই ছিলেন এই সকল জনগোষ্ঠীর ইতিহাস এবং জ্ঞানের আধার। মুখে মুখে তা ছড়িয়ে দিতেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে।
সেদিক থেকে দেখলে আরুকি হয়তো এই পরিণতির কথা বুঝতে পেরেছিলেন অনেক আগেই। তিন নাতি-নাতনিকেই তাই শিখিয়ে গিয়েছিলেন জুমার সংস্কৃতির অনেকটাই। কীভাবে মাছ ধরতে হয়, কীভাবে পেতে রাখতে হয় শিকারের ফাঁদ- সেসবই হাতে ধরে শিখিয়েছেন তাদের। শিখিয়েছিলেন জুমা যোদ্ধাদের লড়াই পদ্ধতিও।
সভ্যতার স্রোতে গা ভাসাতে গিয়ে হারিয়ে গেছে এই জনগোষ্ঠীবছর দুয়েক আগে আরও একটা স্বপ্নপূরণ করেছিলেন আরুকি। তা হল জুমা লংহাউস। এই ধরনের বাড়িতেই উৎসব পালিত হত জুমাদের। সেই উৎসব পালনের জায়গা না থাকলেও শুধু নাতি-নাতনিদের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করতেই একা হাতে তা নির্মাণ করেছিলেন আরুকি। যা ভবিষ্যতেও জানান দেবে জুমাদের অস্তিত্বের কথা। অন্যদিকে তার নাতি-নাতনিরাও ধরে রাখল সংস্কৃতির ব্যাটন।
আধুনিক সভ্যতায় গা ভাসাতে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আধিবাসী গোষ্ঠী। হারিয়ে গেছে অতীতের অন্ধকারে। এভাবেই পৃথিবী থেকে মুছে গেল আরো একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব। চলে গেলেন ব্রাজিল আমাজনে বসবাসকারী জুমা উপজাতীর শেষ পুরুষ আরুকি। সম্প্রতি কোভিড-এ আক্রান্ত হওয়ার পর মারা যান তিনি। তবে ‘জুমা’ সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন তার নাতি-নাতনিরা।
ব্রাজিলের আমাজনের পাশে বয়ে যাওয়া মুকুইম নদীর তীরে বসবাস এই জাতির। জুমা আরার, কাগওয়াহিবম, কাগওয়াহিফ, কাগওয়াহিভ, কাভাহিভা, কাওয়াহীপ, কাওয়াইব এবং ইউমির নামেও পরিচিত। দক্ষিণ ব্রাজিলের অ্যামাজনাস প্রদেশে গভীর জঙ্গলে ‘সাম্রাজ্য’ ছিল জুমা উপজাতির। মৎস্য ও অন্যান্য শিকারের ওপর নির্ভর করেই মূলত দিনযাপন করতেন তারা। বিশ শতকের শুরুর দিক থেকেই বিশ্ব জুড়ে হঠাৎ বৃদ্ধি পায় রাবারের চাহিদা। গোটা জুমা অঞ্চলজুড়ে যে ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর রাবার গাছ, তা নজরে আসতে দেরি হয়নি ট্যাপারদের। আর তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ। চলতে থাকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া। তবে চুপ ছিলেন না তাঁরাও। বেছে নিয়েছিলেন সশস্ত্র আন্দোলনের পথ। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে কী পেরে উঠতে পারে প্রাচীন অস্ত্র? পারেওনি।
জুমা গোষ্ঠীর শেষ মানুষ ছিলেন আরুকিএকাধিকবার গণহত্যার ছায়া নেমে এসেছিল জুমা গ্রামগুলোতে। আর তাদের অস্তিত্বে শেষ পেরেক পুঁতেছিল মারাত্মক এক সংক্রামক রোগ। যা ইচ্ছাকৃতভাবেই ছড়িয়েছিল রাবার ট্যাপাররা। কোনোমতে সেখান থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন আরুকি।
বর্তমানে তার বয়স কত হতে পারে, এ ব্যাপারে সঠিকভাবে কোনো তথ্যই নথিভুক্ত নেই। আনুমানিক ৮৬ থেকে ৯০ বছর বয়স হয়েছিল তার। জীবদ্দশায় গোটা জুমা গোষ্ঠীর পতন এবং ‘সভ্য’ মানুষের হিংস্রতার সাক্ষী থেকেছেন আরুকি। দেখেছেন ‘সভ্যতা’ কীভাবে নিজের স্বার্থে মুছে দিতে পারে একটা গোটা জনগোষ্ঠীকে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে যখন তিনি কিশোর, সেইসময় এই জনজাতির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার। ১৯৯০ সালে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মাত্র ৬ জনে। শুধুমাত্র নিজের পরিবারকেই বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন আরুকি।
বিশ শতকেও এই জাতির লোকসংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজারনব্বইয়ের দশকের পর থেকে কেবলমাত্র তিনিই ছিলেন জুমা সম্প্রদায়ের একমাত্র পুরুষ। আর বর্তমানে এই জনগোষ্ঠীর একমাত্র সদস্যও ছিলেন তিনিই। আরুকির তিন কন্যা থাকলেও তাদের বিবাহ হয়েছিল ‘উরু-ইউ-ওয়া-ওয়াউ’ জনগোষ্ঠীর পুরুষদের সঙ্গে। কারণ ততদিনে মুছে গেছে জুমাদের অধিকাংশ অস্তিত্বই। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তারা এখন আর জুমা জনজাতির অংশ নন। আরুকির নাতি-নাতনিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য একই বিষয়। তারাও জন্মগতভাবে অংশীদার বাবার গোষ্ঠীর।
তবে জুমা ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে অভিনব পন্থা নিয়েছেন তারা। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘উরু-ইউ-ওয়া-ওয়াউ’ এবং জুমা উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ হিসেবেই তারা পরিচয় দেবেন নিজেদের। ইতিমধ্যেই নামের মধ্যেও ‘জুমা’ উপাধি জুড়েছেন আরুকির তিন নাতি-নাতনিই। আরুকির মৃত্যুর জন্য সরকারের অক্ষমতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন বিজ্ঞরা। তার বক্তব্য, আরুকির নিঃসঙ্গ বসবাসের পরে তার কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ছিল না বললেই চলে। কিন্তু জুমা গ্রামে এখনও অনুপ্রবেশ করছেন বহু ব্যক্তি, পাশাপাশি সরকারি কোনো আধিকারিকদের পাঠানোর আগে তাদেরও উপযুক্ত পরীক্ষা ও পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেয়ার দরকার ছিল সরকারের। সেই পথ দিয়েই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস।
আরুকি নিজেই একটি জুমা লংহাউসব্রাজিল সরকারের মতে, এখনও পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন মোট ৫৭২ জন উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষ। তবে একটি স্বাধীন আদিবাসী সংস্থার পরিসংখ্যানে সংখ্যাটা এর প্রায় দ্বিগুণ। আর কোভিডের শিকার হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তিই প্রবীণ। বিষয় হল তাদের মৃত্যুতে যেন আরও শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে এই সংস্কৃতিগুলো। কেন না, তারাই ছিলেন এই সকল জনগোষ্ঠীর ইতিহাস এবং জ্ঞানের আধার। মুখে মুখে তা ছড়িয়ে দিতেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে।
সেদিক থেকে দেখলে আরুকি হয়তো এই পরিণতির কথা বুঝতে পেরেছিলেন অনেক আগেই। তিন নাতি-নাতনিকেই তাই শিখিয়ে গিয়েছিলেন জুমার সংস্কৃতির অনেকটাই। কীভাবে মাছ ধরতে হয়, কীভাবে পেতে রাখতে হয় শিকারের ফাঁদ- সেসবই হাতে ধরে শিখিয়েছেন তাদের। শিখিয়েছিলেন জুমা যোদ্ধাদের লড়াই পদ্ধতিও।
সভ্যতার স্রোতে গা ভাসাতে গিয়ে হারিয়ে গেছে এই জনগোষ্ঠীবছর দুয়েক আগে আরও একটা স্বপ্নপূরণ করেছিলেন আরুকি। তা হল জুমা লংহাউস। এই ধরনের বাড়িতেই উৎসব পালিত হত জুমাদের। সেই উৎসব পালনের জায়গা না থাকলেও শুধু নাতি-নাতনিদের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করতেই একা হাতে তা নির্মাণ করেছিলেন আরুকি। যা ভবিষ্যতেও জানান দেবে জুমাদের অস্তিত্বের কথা। অন্যদিকে তার নাতি-নাতনিরাও ধরে রাখল সংস্কৃতির ব্যাটন।