হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘কুপি’

0
131

বিদ্যুৎ মানুষের এক অনন্য আবিষ্কার। আর এই বিজলীর আলো অর্থাৎ বিদ্যুতের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার হাতবাতি ও চুঙ্গাশিল্প। আঞ্চলিক ভাষায় এটি কুপি বাতি নামে বেশি পরিচিত। এক সময় কেরোসিনের হাতবাতি বা কুপি বাতি ছিলো রাতের আঁধার নিবারণের একমাত্র অবলম্বন। আর এ বাতিতে কেরোসিন ঢুকানোর জন্য চুঙ্গা ছিল একমাত্র উপাদান। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে গ্রামে লেগেছে শহরের ছোঁয়া। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রায় সব বাড়িতেই পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ, রাতে গ্রামের রাস্তার পাশে জ্বলছে ল্যাম্পপোস্ট।

এক সময় কুপি বাতির এই শিল্প ছিলো লাভজনক। বাতি ও চুঙ্গা তৈরি করে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। টিন, কাঁচ, মাটি এই তিন উপাদান দিয়েই তৈরি করা যায় হাতবাতি। কাঁচের বাতিগুলোর দাম ছিলো ৪০/৫০ টাকা, টিনের বাতিগুলোর দাম ছিলো ২০/৩০ টাকা আর মাটির বাতিগুলোর দাম ছিলো ৫/১৫ টাকা। উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে তৈরি হতো এই শিল্প। এ উপজেলার হাত বাতি একসময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যেতো। আর এ শিল্প এখন নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুন:

হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা

এক সময় বিদ্যুৎ চলে গেলেও হাত বাতির ও চুঙ্গার চাহিদা ছিল। তখন কিছু কিছু মানুষ এ পেশাকে আকড়ে ধরে সংসার চালাতো। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে অনেক সহজলভ্য ইলেকট্রিক উপকরণগুলো তৈরি করছেন। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ইমারজেন্সি লাইট, চার্জার লাইট, এলইডি লাইট, আইপিএস, সোলার প্যানেলসহ বিভিন্ন উপকরণ। এগুলো বর্তমান বাজারে কম দামে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, বিদ্যুৎ চলে গেলে মানুষ বিকল্প হিসেবে এসব জিনিস ব্যবহার করে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে কেরোসিনের হাতবাতি ও চুঙ্গার চাহিদা উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে।

আগে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সন্ধ্যা হলেই টিম টিম করে জ্বলতো কোরোসিন তেলের হাতবাতি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এখন হাট বাজারে জ্বলে উঠে বিদ্যুতের আলো। তাই গ্রামের হাটবাজারগুলোতে এখন আর কেরোসিনের বাতি ও চুঙ্গা এখন আর চোখ পড়ে না।

আরও পড়ুন:

হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা

গ্রামের মানুষরা সামর্থ্য অনুযায়ী, কুপি কিনে ব্যবহার করতেন। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের কুপি পাওয়া যেত বড় ও ছোট। বেশি আলোর প্রয়োজনে কুপি বাতিগুলো কাঠ এবং মাটির তৈরি গছা অথবা স্ট্যান্ডের উপর রাখা হতো। এই গছা অথবা স্ট্যান্ডগুলো ছিল বাহারি ডিজাইনের। রূপসী-গ্রামবাংলা আপামর মানুষের কাছে কুপি বাতির কদর কমে গেলেও আবার কেউ কেউ এই কুপি বাতির স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছেন। আবার অনেকেই যত্নে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের নিদর্শন স্বরূপ কুপি বাতি সংরক্ষণ করে রেখেছেন। কুপি বাতির ব্যবহার ও কদর যে হারে লোপ পাচ্ছে। তাতে অদূর ভবিষ্যতে এটি শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে অথবা কোনো এক যাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা হবে আগামীর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here