মা প্রায়ই খুব কাঁদতো
– আসলাম হোসেন
মা একদিন খুব কেঁদেছিল,
আমাকে দুই টাকা দিতে পারেনি বলে।
মা খুব কেঁদেছিল, একটি পাকা আমের জন্য!
অন্যের গাছে দেখে আমি কেঁদেছিলাম বলে।
ছনেরচাল ভেদ করে যখন আকাশ দেখা যেতো
কালবোশেখের মতো তখনও মা খুব কাঁদতো
আমাদের চিন্তায়;
ঝড়ো হাওয়ায় আকাশ ভেঙে পড়বে বলে।
মা প্রায়ই খুব কাঁদতো,
আমরা অনাহারে থাকতাম বলে।
মা একদিন খুব আছাড় খেয়েছিল
আমাকে খাওয়াতে গিয়ে, সেদিনও মা খুব কেঁদেছিল।
মাকে বাবা যখন খুব মারত তখনও মা খুব কাঁদতো।
কতকাল বাবাকে দেখিনি
মাও দেখেনি তাকে!
বাবার আলাদা জগত ছিল।
সেসময়ও মা খুব কাঁদতো-
বলে; না বলে।
শহরের ধূলিমাখা পথে যখন হাঁটতাম একাকী
ভাবতাম, মা কি আজও কাঁদে আমাদের পথ চেয়ে?
বুঝতাম, কাঁদে।
ক বছর আগে বুকের, পিঠের হাড় ভেঙেছিল মায়ের।
তখনও মা খুব কষ্ট পেতো, কাঁদতো।
বাবা মারা যাবারকালেও মা খুব কেঁদেছিল,
জীবনের হিসাবনিকাশ কষে।
মারা যাবার আগে
আইসিওর বন্ধ দরজার ভেতর
মা কেবল অবুঝ শিশুর মতো তাকিয়ে থেকে কষ্ট পেত;
আমি তখন কাঁদতাম।
মায়ের কান্নার ঋণ শোধ হতো না তাতে।
আমাদের মায়েরা কেবলই কাঁদে,
আওয়াজ হয় না কখনও। হতেও নেই নাকি!
কখনো কখনো মায়ের চোখ গড়িয়ে দুঃখ বেয়ে পড়তো।
তবুও মা দাঁড়িয়ে থাকতো হিমালয়ের মতো;
আমাদের ছায়া হয়ে।
মা ছিল নরম ঘাসের মতো,
তার আলিঙ্গনে আমরা সুখ পেতাম।
এইসব দিনরাত্রি ফুরিয়েছে আজ
কিন্তু মা তো নেই।
দুঃখের আঁধার কাটে না।
মাকে অনুভব করি প্রতিক্ষণ।
মাকে আবিষ্কার করি প্রতিদিন!
শিশুকালে হেঁটে যাওয়া মেঠোপথের সেই আঁকাবাঁকা চিহ্ন আজ ভাসে;
মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনি। মাকে খুঁজেফিরি গহন থেকে গহীনে-
তাকে বলতে চাই- ‘মা, তোমায় ভালোবাসি’।
কিন্তু মা আসে না।