আওয়াম অর্থ জনতা বা জনগণ, সেই অর্থে আওয়ামী লীগ হলো জনতার দল বা জনগণের দল। জনগণের দলটি দিনদিন এলিটদের হাতে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে এটাই বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংকট। আমরা আশেপাশে তাকালেই দেখতে পাই কিছু উপরের শ্রেণীর লোকদের কাছে আওয়ামী লীগের নেত্তৃত্ব সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। কিছু এমপি,কিছু মন্ত্রী, দলের কিছু সভাপতি সেক্রেটারি ও তাদের আত্মীয় -কর্মচারী মিলেই আওয়ামী লীগকে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। শুধু মুখে জনগণ ও আদর্শের বড়বড় কথা বলা এসব নেতাদের জীবনযাপনের সাথে জনগণের জীবনধারণের আকাশপাতাল পার্থক্য বিদ্যমান ।
যেহেত দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে সেহেতু ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ক্ষমতাসীন সরকারে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে সচিবালয় থেকে শুরু করে পতিতালয় পর্যন্ত সবাই আওয়ামী লীগের লোক সেজে বসে আছে। আসলে কি সবাই আওয়ামী লীগের লোক,সবাই কি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে মন থেকে মানে? করোনাকালে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আগের মতো খুব কাছ থেকে নেত্রীকে পাচ্ছেন না সরকারি উচ্চপদস্থ সরকারি আমলারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে রেখেছে , একারণে তৃণমূলের খবর নেত্রীর কাছে পৌঁছাতে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
মিডিয়া আর সরকারি বেসরকারি গোয়েন্দাদের গোয়েন্দাগিরি বিগত ছাত্রলীগের সম্মেলনের তিনমাসের তদন্তের মাধ্যমে আনাড়ি ও মাদকাসক্তদের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি দেখেছে। জনগণের দল আওয়ামী লীগের পদধারী কিছু নেতার জনবান্ধন বিরোধী আচরণ থামানো,আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কিছু শীর্ষ নেতাদের নিয়মিত জবাবদিহিতার আওতায় আনা, জনগণের শেষ আশ্রয়ের জায়গা গণভবনের কিছু কর্মকর্তা,ও আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত বেতনভুক্ত স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের লোকজন তাজউদ্দীন আহমদকে বিতর্কিত করতেও দু’বার ভাবেন না উল্টো তাদের চাকরির কাজ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের সোহেল তাজসহ পিছনের সারির তমুল জনপ্রিয় ব্যারিস্টার সুমন ভাইয়ের মতো অসংখ্য উপকমিটির সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত সমালোচনা করে এই জ্ঞানদান বন্ধ করতে হবে । এই বেতনভোগীদের দুর্ব্যবহার ও নিয়মিত কটাক্ষ-বানে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ত্যাগীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে।
দলীয় প্রতীকের নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে দলে পদ বানিজ্য বেড়ে গেছে,একশ্রেণির সিনিয়র জেলার সভাপতি সেক্রেটারি, এমপি -মন্ত্রী বা নেতারা এর সাথে জড়িয়ে আছে। আমি এক মন্ত্রীকে জানি যার উপজেলায় তার আত্বীয়ের বাইরে কাউকে পার্টি করতে দেওয়া হয়না,ঐ নেতা ও তার আত্বীয়রা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে কুকুরের মতো দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন করে। এলাকার সাধারণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলে থানার ওসি ওদের কথা না শুনলে ওদের বংশসুদ্ধ পালাতে হবে। জনৈক নেতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চেয়ে বিভিন্ন বৈদেশিক এমবাসি বেশিবেশি মেইনটেইন করে।
এরকম নেতারা প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষতি করছে। এদের মুখোশ একদিন উন্মোচন হবে হয়তো ততদিনে দলের অনেক ক্ষতি হয়ে যাব। যার জন্য প্রয়োজন চলমান অভিযানের মাধ্যমে ভালো কাজের পুরস্কার আর খারাপ কাজের শাস্তি নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগের এই সংকটের মূল কারণ দলের কিছু নেতাকর্মীদের ভোগবাদী জীবনযাপন, চরিত্রহীনতা ও নীতি -আদর্শের জায়গা থেকে সরে আসা। আমরা তরুণ প্রজন্মের কর্মীরা জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া একজন নেতাকেও কাছাকাছি থেকে পাইনা যারা কর্মীদের পরিবারের সদস্য মনে করে আপন করে নেয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শিক উত্তরাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,বঙ্গতাজ সৈয়দ তাজউদ্দীন আহমেদ ও সৈয়দ আশরাফসহ অসংখ্য আইকন রয়েছে যাদের মত নেতৃত্ব তৈরি করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্মই হয়েছিল জনতার দল হিসেবে দেশের গণমানুষের মুক্তিদানের জন্য,সে মুক্তি আজ-ও এদেশের মানুষের হয়নি। যার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত, যার জীবনআদর্শ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শতভাগ সঙ্গতিপূর্ণ সেই প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা তার জীবনবাজি রেখে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং দলের নেতাকর্মীদের আদর্শের রাজনীতি উপহার দিচ্ছেন, সেখানে কতিপয় আত্ম অহংকারী নেতাদের কারণে দেশের মানুষের ও দলের নেতাকর্মীদের দুরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
জন্মলগ্ন থেকেই সংকট এবং সংগ্রাম আওয়ামিলীগের নিত্যসঙ্গী। সংগ্রাম করেই আওয়ামিলীগ এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের বাতিঘর হয়ে উঠেছে৷ বিভিন্ন সমস্যা থাকার পরও আমরা আশাবাদী হই কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শতভাগ অনুগত থেকে তার দেখানো পথে সংগঠন কে এগিয়ে নিতে নাসিম ভাই,আজম ভাই সহ আরো কিছু নেতৃত্ব আমাদের সামনে আছে।
এই সংকট দূর করতে হলে ভালো কাজের পুরস্কার ও খারাপ কাজের শাস্তি নিশ্চিত করে দলকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে শ্রদ্ধেয় বাহাউদ্দীন নাসিম ভাই ও মির্জা আজম ভাইয়ের মতো নেতা তৈরি করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ বাঁচলেই বাংলাদেশ জিতবে ।
শেষ করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি বলতে চাই তা হলো- এই ধারা চলতে থাকলে তৃণমূলে আর কোন রাজনীতি অবশিষ্ট থাকবে না। ত্যাগী আর যোগ্যরা ক্রমেই হারিয়ে যাবে। সবার আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নিয়ে যে অর্থের ঝনঝনানি শুরু হয়েছে সেটা থামাতে হবে। কারণ আমরা দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাগুলোতে দলীয় প্রতীক বিক্রির খবর শুনতে পাই। সবচেয়ে দুঃখের খবর আজ টাকার বিনিময়ে জামাত, বিএনপির লোকেরাও ত্যাগী আওয়ামীলাগরদের টেক্কা দিয়ে অর্থের বিনিময়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসছেন। এটা যেকোন মূল্যে থামাতে হবে। মাননীয় নেত্রীকে অনুরোধ করব তৃণমূল বাঁচাতে প্রয়োজনে এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হোক স্থানীয় নির্বাচনের এই আত্মঘাতি মনোনয়ন বাণিজ্যকে। এখানে যেসকল আওয়ামী লীগ নেতা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই। সে এমপি হোক আর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হোক। দলের স্বার্থেই ব্যবস্থা নেয়া হোক। কারণ তাদের কারণেই আওয়ামী লীগ তৃণমূলে কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছে। যা পিতা মুজিবের রক্তের সাথে স্পষ্ট বেঈমানী।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সফল হোক। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
মেহেদী হাসান রনি
সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি