বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; যে সংগঠনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যে সংগঠনের নেতৃত্বে দীর্ঘকালের শোষণ-নীপিড়নের শৃঙ্খল ভেঙ্গেছিল বাঙালি জাতি, যে সংগঠন বাংলাদেশ নামের সমার্থক, সে সংগঠনের ৭২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একটি গাড়ী ততক্ষণ আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে না, যতক্ষণ দক্ষ চালক ড্রাইভিং সিটে বসে সেটিকে চালাবেন না। বঙ্গবন্ধুই তাঁর দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে শোষিত বাঙালিদের আওয়ামী লীগ নামক গাড়ীর যাত্রী করে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। তাই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার দিনে কিংবা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ উঠলেই সেই সংগঠনকে গণমানুষের একমাত্র সংগঠনে পরিণত করে বাংলার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে বাঙালি মাত্রই এটা স্বাভাবিক।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে প্রতিষ্ঠা লাভ যেমন ছিল সময়ের বিবেচনায় সহি, ঠিক তেমনি পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামে পরিবর্তিত হয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বন্ধুর পথে এগিয়ে চলাও ছিল সহি। এম.পি.টি(ম্যানার, প্লেস, টাইম) যে নেতা বুঝে না, সে নেতা কখনো তার অনুসারিদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর এম.পি.টি’র সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং সে অনুযায়ী নেতৃত্বের কারণেই অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারী ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ বাঙালি জাতির বহু বছরের কাঙ্খিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে রূপান্তরিত হতে পেরেছিল।
বঙ্গবন্ধু এই দেশ ও জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার পর অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই ৭১ এ যেমন অধিকাংশ বাঙালিকে আওয়ামী লীগের ছায়াতলে এনেছিলেন, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিকদের ‘বাকশাল’(বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) এর পতাকাতলে এনে স্বার্থান্বেষী মহলের ভাষায় একদলীয় মনে হলেও কার্যত তিনি বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে সাম্যের বাংলাদেশই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতির জনক যে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, ৭১’র পরাজিত শক্তির দোসর মোস্তাক, জিয়াদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে না হলে আজ হয়তো বাংলাদেশ বাকশালের নেতৃত্বে চীনের মত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হত, আর আমরা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে নাম থেকে ‘মুসলিম’ অপসারণ করে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’, স্বাধীনতা পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের অংশীদার হয়ে আজ ‘বাকশাল’ এর কর্মী বা সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতাম। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল ত্যাগী এবং নিবেদিত নেতা-কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা।
লেখকঃ আদিত্য নন্দী
উপ-প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ