সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কর্তনে উদ্বিগ্ন নগরবাসীর মানববন্ধন

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্তোরাঁ, হাঁটার পথ নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজে গণপূর্ত বিভাগের নির্দেশে গাছ কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশকিছু বড় ও পুরনো গাছ কাটা হয়েছে।

জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবগুলো প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭টি রেস্টুরেন্ট স্থাপন করার কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদের দাবি, নিয়ম মেনেই গাছগুলো কাটা হচ্ছে।

রাজধানীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা নিয়ে এরই মধ্যে নানান প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থাপনা শিল্পকর্ম নির্মাণ করে গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়েছে চারুকলার একদল শিক্ষার্থী। এছাড়াও উদ্যানে অযথা রেস্তোরাঁ নির্মাণ ও নির্বিচারে গাছ নিধন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন ও নগরবাসী।

বুধবার (৬ মে) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন গেটে গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ‘নোঙর বাংলাদেশ’, ‘স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট’, ‘গ্রিন প্যানেট’ নামে তিনটি সংগঠন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খাবারের দোকান বানানোর নামে প্রকৃতি হত্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে করপোরেট সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে। যার মূলে রয়েছে লুটপাটের অশুভ উদ্দেশ্য। যেখানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রকৃতি বাঁচিয়ে রেখে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, সেখানে আমাদের দেশে গাছ কেটে হাঁটার পথ, খাবারের দোকান বানানো হচ্ছে। একটু চেষ্টা করলেই গাছগুলো বাঁচানো যেত।

অবিলম্বে এই প্রকৃতি হত্যার আয়োজন বাতিলের দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে বনফুল নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতামূলক গান পরিবেশন করে।

এদিকে মঙ্গলবার (৪ মে) উদ্যানটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক অনলাইন আলোচনা সভায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অযথা রেস্টুরেন্ট নির্মাণ ও নির্বিচারে গাছ নিধন বন্ধ করাসহ ৬ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

সুপারিশে বলা হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবেশ, তত্ত্বাবধান, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, দৈনন্দিন পরিচালনা বিশ্বমানের করতে হবে; রমনা গ্রিন ধরে রাখতে হবে; উদ্যানের স্থান ও পরিবেশ সংরক্ষণ করতে একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিতে হবে; উদ্যানে রেস্তোরাঁ, ওয়াকওয়ে কিংবা এ জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বিস্তৃতভাবে অবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং উদ্যানসহ সব ঐতিহাসিক স্থাপনা বা এলাকার উন্নয়নের জন্য নগর পরিকল্পক, স্থপতি, শিল্পী, ইতিহাসবিদ, উদ্যানবিদ, প্রকৌশলী, শিক্ষক, পরিবেশবিদ ও কবি-সাহিত্যিক সব স্টোকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে হবে। যারা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন ও প্রয়োজনীয় মতামত দেবেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মানুষ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে উদ্যানকে ঘিরে বিভিন্ন রকম পরিবেশ বিরোধী অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলায় পরিবেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রমনা পার্ক এলাকা রাজধানীর ‘ফুসফুস’ হিসেবে চিহ্নিত। ইতিহাসের সাক্ষী সবুজের সমারোহ গাছ-গাছালির ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

তারা আরও বলেন, দেশের নতুন প্রজন্ম, পরবর্তী প্রজন্ম বংশ পরম্পরায় শত শত বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেখবে এবং এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্মরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত স্থানগুলো চিহ্নিত করেই ঢাকার এই খোলা ময়দানকে উন্মুক্ত রাখা সম্ভব। সবুজ প্রায় নিঃশেষিত উদ্যানটি আর যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer