সাকিব আল হাসান “খলনায়ক” নাকি “বিপ্লবী”!

গতকাল আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ চলাকালীন মুশফিকুর রহিমকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আম্পায়ারের নিকট আবেদন করেন সাকিব কিন্তু খুবই ক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধানে আম্পায়ার সেটা নাকোচ করে দেয়ায় মেজাজ হারিয়ে স্ট্যাম্পে লাথি মেরে বসেন সাকিব আল হাসান।

আপাতদৃষ্টিতে একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে হটাৎ করে এরকম আচরণ দেখে হয়তো কারো কারো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে সেজন্য বাংলাদেশের ঘরোয়া লীগ সম্পর্কে কিছু ধারনা দেয়া যাক।

২০১৮ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বরের ম্যাচে প্রকাশ্য দূর্নীতির প্রমাণ মিলে।

বৃষ্টিতে উইকেট না ঢাকা, দোলেশ্বর ক্রিকেটারদের সময় না দিয়ে জোর করে মাঠে নামানো, ক্রিকেটারদের উপর আম্পায়ারের অন্যায় খবরদারি কিংবা ম্যাচ চালানোর পরিস্থিতি না থাকলেও খেলা চালিয়ে নেয়া। নানান অনিয়ম আর অন্যায়ের স্বাক্ষী এই আবাহনী-দোলেশ্বর ম্যাচটি।

খালেদ মাসুদ পাইলট,নাজমুল আবেদীন ফাহিমরা নিজেদরকে ঘরোয়া লীগের সকল কার্যক্রম থেকে সড়িয়ে নিয়েছেন দূর্নীতির অভিযোগেই

কোনো সময় দেখা যায় পিচে পুরো রোদের মধ্যে কাভার দিয়ে রাখা আবার কোনো সময় বৃষ্টির মধ্যেও পিচে কাভার থাকে না। অনেক সময় এমনও হয় যে পাশের মাঠে খেলা হচ্ছে কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনো এক নির্দিষ্ট মাঠে খেলা বন্ধ।

১ ওভারে ৯২ রান কিংবা ১ বলে ৬৯ রানের বিরল রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে!

২য় এবং ৩য় শ্রেণির ক্রিকেটে প্রকাশ্যে ম্যাচ ফিক্সিং হয়।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে চলমান টুর্ণামেন্টে আবাহনী লিমিটেডের কোনো ব্যাটসম্যান লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হননি প্রতিবারই আম্পায়ার ক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধানে আবেদন নাকোচ করে দিয়েছেন।

২০১৯ সালে ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই, সেসকল দাবির পাশাপাশি বিশেষভাবে একটা জিনিস উল্লেখ ছিলো,

“ঘরোয়া ক্রিকেটে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগে ইচ্ছে করেই কোনো দলকে জেতানো বা হারানো হয়। এসব বন্ধ করতে হবে।”

সামান্য বৃষ্টিতেই বেশিরভাগ মাঠ পুকুরে পরিণত হয় তাছাড়া এদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মানের আম্পায়ারও বের হচ্ছে না।

যে সাকিব আল হাসান অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পিছপা হননি সেখানে দেশের এই দূর্নীতিগ্রস্থ টুর্নামেন্টে সাকিবের দম বন্ধ হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক না।

যে সাকিব ২০২৩ বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর সে সাকিব কি করে এত অনিয়ম মেনে নিবে?

সাকিবের এই ক্ষোভের বিস্ফোরনটা দেশের সকল সৎ ক্রিকেটার আর কোচদের পক্ষ থেকে।

এই লাথিটাই যেন শেষ লাথি হয় কেননা সাকিবের আদর্শে লালিত হওয়া সাইফুদ্দিন,আফিফ,মিরাজদের লাথিটা কিন্তু বুকে/মুখেও লাগতে পারে।

তিনি যেটা করেছেন সেটা অবশ্যই অনেক বড় অপরাধ তবে মাত্রই শাস্তি থেকে ফিরে আসা সাকিব নিজের কথা চিন্তা না করে যেভাবে দেশ এবং দলের জন্য চিন্তা করেছেন তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় বাংলার ক্রিকেটের বিপ্লবী চে গুয়েভারা সাকিব আল হাসানই!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer