সহায়তার নামে একের পর এক বিয়ের প্রস্তাবে অতিষ্ঠ ডালিয়া

সহয়তার নামে একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে নিহত নাহিদের স্ত্রীকে অতিষ্ট করে ফেলছেন মানুষ। শোকে পাথর নাহিদের স্ত্রী ডালিয়া এ নিয়ে নিজের ক্ষোভ ও বিরক্তির কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ মাত্র ৬ মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। স্বামী হারানোর শোক সামলে তাকে লড়াই করতে হচ্ছে আরও এক অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সঙ্গে। নাহিদের মৃত্যুর পর লোকজন সাহায্য-সহযোগিতা করার নামে ফোনে ডালিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ সকালে বাড়িতে গিয়েও বসে থাকছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। বারবার এমন প্রস্তাবে বিব্রত-বিরক্ত-ক্ষুব্ধ তিনি।

সদ্য বিধবা ডালিয়ার পাশে যেন সমাজের বিত্তবানরা দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সেসব খবরে যুক্ত করে দেওয়া হয় ডালিয়ার বিকাশ নম্বর। আর এই নম্বর নিয়েই কিছু লোক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ফেলছে ডালিয়াকে। স্বামীর মৃত্যুর সপ্তাহ না পেরোতেই ফোনে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।

ডালিয়া জানিয়েছেন অনেকে ইমো নম্বরে ভিডিও কল দিয়েও সহযোগিতার নামে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে চাইছে তার সঙ্গে। তিনি বলেন, লোকজন সহযোগিতার নামে ফোনে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ফোন দিয়ে বলে, বিয়ে-শাদি করবেন কি না, সেই চিন্তা-ভাবনা আছে কি না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজ যদি আপনার (প্রস্তাবদাতা) কোনো বোন হতো, তাহলে কি এমন কথা বলতে পারতেন?

‘‘আজ আমার স্বামী মারা গেছে ১২ দিন। ১২ দিন হওয়ার আগেই আপনারা এসব কথা (বিয়ের প্রস্তাব) বলেন। আপনাদের ঘরে মা-বোন থাকলে তাদেরও কি ১২ দিনেই এসব কথা বলতেন? অন্তত ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর, ছয় বছর তো যাইতো। আপনারা কেন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন?

আরও পড়ুন: নাহিদের স্ত্রীর হাতে লেখা ‘আই লাভ ইউ নাহিদ’

নিজের বিরক্তির কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অনেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সকালে বাসায়ও আইসা বইয়া থাকে। সকাল ৭টা বাজে আইসা বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সবাই বিয়ের কথা বলে অথচ কেউ টাকা সহযোগিতা করে না। এই বিষয়টা নিয়ে পরিবার বিরক্ত। নম্বর দিয়েছি যেন আমার হেল্প হয়। তবে দয়া করে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেবেন না

গত মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় নূরজাহান সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে নেভি ব্লু টি-শার্ট পরা নাহিদকে আহতাবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, ওই রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে পরদিন নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।

সহায়তার নামে বিরক্তির অভিজ্ঞতা থাকলেও কেউ কেউ নাহিদের স্ত্রীর পাশে দাড়িয়েছেন। নিউমার্কেটে সংঘর্ষে নিহত নাহিদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।

এছাড়া নাহিদের পরিবারকে সেলাই মেশিন দিয়ে শোকার্ত এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার। শুধু তাই নয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে তিলোত্তমা ওই পরিবারের কথা বলিয়ে দিয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যেই একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে বলে তিলোত্তমা নিজের ফেসবুকে জানিয়েছেন।

নিহত নাহিদের মা নার্গিস বেগম বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ ১০ লাখ টাকার চেক দিয়েছে, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। মগবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতা হেলাল সাহেব বলেছেন আমাদের ছোট পিকআপ ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেবেন। এছাড়া ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এক লাখ টাকা দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer