দেশের বক্সিংয়ের ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কোন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সুরো কৃষ্ণ চাকমা তার সফলতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কৃতিত্ব দিয়েছেন। ‘সাউথ এশিয়ান প্রফেশনাল বক্সিং ফাইট নাইট-দ্য আল্টিমেট গ্লোরি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক বক্সিং প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া সুরো কৃষ্ণ চাকমা তার সাফল্যের পেছনে নিজস্ব সাধনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অবদানকে বড় করে দেখছেন। ঢাবির প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ ও জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন, থাকতেন হলের অক্টোবর স্মৃতি ভবনের ৪১২ নম্বর রুমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, খেলার মাঠ, জিমনেসিয়ামসহ হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় তাকে এই অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে বলে ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে সেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) আয়োজনে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মোট ১৪ জন বক্সারের অংশগ্রহণে ‘সাউথ এশিয়ান প্রফেশনাল বক্সিং ফাইট নাইট-দ্য আল্টিমেট গেøারি’ প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে চার রাউন্ডের খেলায় নেপালের মাহেন্দ্র বাহাদুর চান্দকে পরাজিত করে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পেশাদার বক্সিংয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেন সুরো কৃষ্ণ চাকমা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশও প্রফেশনাল বক্সিং জগতে প্রবেশ করল। এর মাধ্যমে মিলতে পারে বিশ্বের নামকরা সব বক্সিং আয়োজকদের অধীনে কাজ করার সুযোগ।
কৃষ্ণ চাকমা এই প্রতিযোগিতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন দুই মাস থেকে। কঠোর পরিশ্রম, প্রচণ্ড রকম ভালো লাগা, নিয়মানুবর্তীতা, খাবার-দাবার, প্রশিক্ষণসহ একটা পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। এগুলোর একটি অন্যটির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটাকেই সাফল্যের রহস্য মনে করছেন তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার দুই মাস আগ থেকে খুব নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। সকালে উঠে দৌড়ানো, বিকালে ফুটবল খেলা, নির্ধারিত খাদ্যাভাস ঠিক রাখতে হয়। আমি এগুলো চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতেও আমি এসব মেনে চলতাম। সকালে উঠে দৌড়াতাম, বিকালে হলের মাঠে ফুটবল খেলতাম, এভাবেই ফিটনেস ঠিক রাখতাম।
তিনি আরো বলেন, এর বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গুলিস্তানে বক্সিং ফেডারেশন- সেখানেও হেঁটে যেতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামও আমাকে সাহায্য করেছে। পাঁচ বছর হলে ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আমাকে বেশ ভালোই সাহায্য করেছে। এ রকম মাঠ না থাকলে আমি ফিটনেসটাকে ধরে রাখতে পারতাম না।
কৃষ্ণ চাকমার বক্সিং ক্যারিয়ারের শুরু হয় সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়। রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় এই উদ্যমী ও মেধাবী শিক্ষার্থী ২০০৭ সালে বিকেএসপিতে কোচ আবু সুফিয়ান চিশতির অধীনে বক্সিংয়ে ভর্তি হন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫ জন কোচের অধীনে কাজ করেছেন।
ছয় বছর কঠোর সাধনার পরে বক্সিংয়ে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন, ২০১৪ সালে দেশের মধ্যে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হন। নেপালে অনুষ্ঠিত ‘সাউথ এসিয়ান গেমস-২০১৯ এ এমেচার বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জপদক পান। এছাড়াও ২০১৮ সালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে দুটো খেলায় জয়লাভ করেন। তার নিজস্ব প্রথম আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ছিল ২০১৪ সালের স্কটল্যান্ডের গøাসগো কমনওয়েলথ গেমস। এর বাইরেও ২০১৫ সালে দেশের মধ্যে সেরা বক্সার নির্বাচিত হয়ে লন্ডনে ছয় মাসের একটি ট্রেনিং করার সুযোগ পেয়েছেন।
এসব সাফল্যকে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগিয়ে সামনের দিনগুলোতে দেশের জন্য কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ঢাবির সাবেক এই শিক্ষার্থী।