এক শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কেবল ফরম বিক্রি করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয় করেছে ২৭ কোটি টাকারও বেশি। আর এই আয় করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রি করেছে ২৯ কোটি টাকার ভর্তি ফরম। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের নতুন রেকর্ড। এর আগে আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোন একটি চাকরির পরীক্ষার জন্য এত টাকার ফরম বিক্রি দেখেনি বাংলাদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শেষ হয়েছে ১০ মে । পাঁচটি ইউনিটে ৬ হাজার ৩৫টি আসনের বিপরীতে এবার ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৪১টি ফরম বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে মোট ২৯ কোটি ৩ লাখ ৪১ হাজার টাকার ভর্তি ফরম বিক্রি হয়েছে।
এ বছর ভর্তি ফরমের মূল্য গতবারের চেয়ে ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার জন্য ৯৫৬ টাকা ৫০ পয়সা, অনলাইন সার্ভিস চার্জ ৩০ টাকা ও ব্যাংক পেমেন্ট সার্ভিস চার্জ ১৩ টাকা ৫০ পয়সাসহ মোট ১ হাজার টাকা চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের (সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রুপালী) যেকোনো একটির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়েছে।
ফরম বিক্রির ২৯ কোটি ৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৩ টাকা অনলাইন সার্ভিস চার্জ ও ব্যাংক পেমেন্ট সার্ভিস চার্জ বাবদ খরচ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। অর্থাৎ ভর্তি ফরম বিক্রি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৭৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৭ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ‘ক’ ইউনিটের এক হাজার ৮৫১ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৭১০ জন। এ ছাড়া ‘খ’ ইউনিটের এক হাজার ৭৮৮ আসনের বিপরীতে ৫৮ হাজার ৫৫১ জন, ‘গ’ ইউনিটে ৯৩০ আসনের বিপরীতে ৩০ হাজার ৬৯৩ জন, ‘ঘ’ ইউনিটে এক হাজার ৩৩৬ আসনের বিপরীতে ৭৮ হাজার ২৯ জন এবং ‘চ’ ইউনিটে ১৩০ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৭ হাজার ৩৫৭ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুধবার তিনি জানান, ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু পেমেন্ট এন্ট্রি না হওয়ায় প্রতি ইউনিটে ১০০ টির মতো আবেদন বাড়তে পারে।
ভর্তি কমিটির তথ্য অনুযায়ী, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটে ১১ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার টাকার ফরম বিক্রি হয়েছে। কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিট পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ ৫১ হাজার, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিট তিন কোটি ছয় লাখ ৯৩ হাজার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিট ৭ কোটি ৮০ লাখ ২৯ হাজার ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ‘চ’ ইউনিট ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকার ফরম বিক্রি করেছে।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ফি ৪৫০ টাকা করা হয়। এর ঠিক পরের শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে আবেদন ফি করা হয় ৬৫০ টাকা। চলমান ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফি একলাফে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। টানা তিন শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি ৬৫০ টাকা বাড়ল।
গত তিন বছরের তুলনায় এবার স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি বেড়েছে। আর তা প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার আট কোটি ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ টাকার ফরম বিক্রি হয়। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৫০ টাকা ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২১ কোটি ৮ লাখ ২১ হাজার টাকার ভর্তি ফরম বিক্রি হয়। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে ফরম বিক্রি ২১ কোটি টাকা বেড়েছে।
ভর্তি ফরমের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ায় গত বছরের ফিতে খরচ সংকুলান হয়নি বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এছাড়া পরিবহনসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধি বেড়ে ছে। সেকারণে ‘ন্যূনতম’ ফি বাড়ানো হয়েছে।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বলেন, বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নিতে গিয়ে খরচের পরিমাণটা অনেক বেশি হয়ে গেছে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। তাই এবার ৬৫০ থেকে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার অনলাইন ফি আছে, ব্যাংকের চার্জ আছে। সব কিছু বিবেচনা করা মিনিমামটাই নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কারণে শিক্ষার্থী প্রতি আমাদের খরচ পড়ে প্রায় সাড়ে ১৩শ টাকা। এই টাকা হলে মোটামুটি সংকুলান হয় বলে জানিয়েছেন ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ডিনরা। ফলে এই ১০০০ টাকাও কম। যেটি সবচেয়ে নূন্যতম সেটা আমরা রাখছি।
ভর্তি কমিটির নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ৩ জুন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এরপর ৪ জুন কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিট, ১০ জুন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিট, ১১ জুন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিট আর ১৭ জুন চারুকলা অনুষদভুক্ত ‘চ’ ইউনিটের সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।