ডেঙ্গু রোগটি এক সময় মৌসুমি রোগ ছিল, কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সারা বছর জুড়ে প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এর ফলে এই রোগের চার ধরনের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে রোগটি দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ আর ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে ওঠার পরেও সেদিকে নজর না দেয়ায় ডেঙ্গু মারাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিদিন শত শত ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রচণ্ড চাপ বাড়ছে। এতে শয্যা সংকটে অনেকেই চিকিৎসা নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। এ ছাড়া চিকিৎসায় অবহেলারও অভিযোগ উঠছে। সব মিলিয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়লেও তা তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে চলতি বছর মৌসুমের আগে আগে প্রকট হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর বিস্তার এ বছর ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মৃত্যুহারও আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চলমান এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু এখন আর বর্ষা মৌসুমের আতঙ্ক নয়। এর ভয়াবহতা দিনদিন বাড়ছে।
তারা আরও জানান, এটি মোকাবিলায় দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও ব্যাপকভাবে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার অভাবেই বাড়ছে ডেঙ্গু।বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, সেই সঙ্গে এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে। শহরে গ্রামে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া পানি জমে যাওয়া, নগরায়নের ফলে পানি আটকে থাকার কারণে ডেঙ্গু মশা বেড়েছে, ফলে রোগীও বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান গনমাধ্যমে বলেন, ডেঙ্গু এখন আর সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জুন মাস থেকে শুরু হয়েছিল। চলতি বছর মে মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি হওয়ার পেছনে একটি কারণ হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ দিয়ে নির্ণয় করতে না পারা। এবার কমপ্লিকেটেড ডেঙ্গু সিনড্রম দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, অনেক রোগী পেয়েছি, যারা ডায়রিয়া নিয়ে এসেছে। অনেকে বমি নিয়েও এসেছে। পেট ও বুকে পানি জমেছে, হাত ও পা ফুলে গেছে এমন রোগীও এসেছে। মস্তিষ্কের প্রদাহ, খিঁচুনি নিয়ে অনেক রোগী এসেছে। অনেকের সেন্স আছে কিন্তু ব্লাড প্রেসার রেকর্ড করা যাচ্ছে না। জ্বর অনেক সময় থাকে, অনেক সময় থাকে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলাতেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশে যে সময়কালকে ডেঙ্গুর মৌসুম বলে ধরা হয়, তার আগেই আক্রান্তের সংখ্যা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
আক্রান্তদের বেশিরভাগই ঢাকা শহরের বাসিন্দা। এছাড়া রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর, বগুড়ায় খবর নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত নতুন নতুন রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায়, মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৭৯২ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ৬ মাসে ১৪৬ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। আর চলতি মাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৯৯ জন।