ভারতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের মৃত্যু দুই লাখ ৩৮ হাজারের মতো। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে এই সংখ্যা ১০ লাখ পার হয়ে যেতে পারে।
শনিবার প্রকাশিত খ্যাতনামা মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের এক সম্পাদকীয় পর্যালোচনায় ভীতিকর এই তথ্য উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড এভাল্যুয়েশনে’র (আইএইচএমই) একটি হিসাব ওই পর্যালোচনায় উদ্ধৃত করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘শেষ পর্যন্ত এটা (হিসাব) যদি সত্যিই বাস্তবে ঘটে যায়, এই জাতীয় বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।’
করোনার ক্ষেত্রে ভারতে রেকর্ড শব্দটা এখন আর নতুন কিছু নয়। প্রতিদিনই দেশটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টাতেও দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। এ সময়ে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ১৮৭ জনের। শনিবার এনডিটিভির খবরে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন চার লাখ এক হাজার মানুষ। আগের কয়েকদিনের তুলনায় সংক্রমণ কিছুটা কমেছে।
এই প্রথম ভারতে একদিনে চার হাজারের বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। আর এক সপ্তাহে চতুর্থবারের মতো দৈনিক সংক্রমণ চার লাখ ছাড়াল। এ নিয়ে ভারতে করোনায় মোট দুই লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আর দেশটিতে মোট সংক্রমিত হয়েছে ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৬ জন। তবে ল্যানসেটের পর্যালোচনার তথ্য মতে, আগামী আগস্ট মাসে ভারতের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটা কমে আসবে। প্রতিদিন মৃত্যু হবে প্রায় দুই হাজার মানুষের। বিপরীতে সংক্রমণ সংখ্যা আরও বাড়বে। দৈনিক আক্রান্ত হবে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার জন।
করোনার বাড়বাড়ন্তের জেরে ভারতে ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। রাজধানী দিল্লিসহ বহু এলাকা থেকে হাসপাতালে অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর সংকটসহ চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতির খবর এখনও আসছে। চিকিৎসকরা খোলাখুলি তাদের অসহায়ত্বের কথা বলছেন।
পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে একের পর এক উচ্চ আদালত কোভিড সামাল দিতে সরকারের ব্যবস্থাপনাকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করছে, নির্দেশনা দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন অক্সিজেনের সংকট পুরো সমস্যার একটি মাত্র দিক। কিন্তু তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না ভারতের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারগুলো।
সুপ্রিমকোর্ট ও বিরোধীদের চাপের মুখে সংক্রমণ ঠেকাতে গত কয়েকদিনে লকডাউন এবং রাত্রিকালীন কারফিউ ঘোষণা করেছে বেশ কয়েকটি রাজ্য।
তামিলনাড়ু, কেরালা এবং মনিপুর এই তালিকায় নতুন। সোমবার থেকে আগামী ২৪ মে পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছেন কর্নাটক।
তামিলনাড়ুও দুই সপ্তাহের কারফিউ ঘোষণা করেছে। কার্যকর হবে ১০ মে থেকে। মনিপুরে কারফিউ কার্যকর থাকবে ১৭ মে পর্যন্ত। এ বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতে সবচেয়ে বড় পরিসরে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। তবে অনেক রাজ্যে টিকা নিয়ে সংকট দেখা দেয়। ফলে টিকাদান কর্মসূচি ধীরগতিতে চলতে শুরু করে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন মতে, ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ২৪টি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে।
তারপর রয়েছে কর্নাটক, কেরালা, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।