আমি যে ঘরটাতে রই ঠিক তার পিছনেই গাছটি। জানালা থেকে হাত বাড়ালেই ওর পত্র পল্লব ছোঁয়া যায়। কেউ-ই ওর বীজ বপন করেনি।হয়তো কোন নাম না জানা পাখি ওর বীজ বয়ে নিয়ে এসেছে।ওর গোড়ায় কেউ-ই পানি ঢালেনি, ঝড়ে উপরে যাবে ভেবে ওর কান্ডের সাথে কঞ্চি বেঁধে দেয়নি।তারপরও ও টিকে গেছে।টিকে থাকার এক আশ্চর্য শক্তি রয়েছে ওর।বর্ষার জলে,ঝর বাদলে কিছুই করতে পারেনি ওর। আমাদের সকলের অগোচরে ও বেড়ে উঠছিল। এমনকি ও যখন গুরুত্ব পাওয়ার মত যথেষ্ট বড় হল তখনও ও আমাদের নজর কাড়ে নি।মাঝেমধ্যে প্রয়োজন হলে আমরা ওর ডাল কেটে লাকড়ি বানাই। সেই লাকড়ি দিয়ে হরেক রকম রান্না হয়। লাকড়ি বানাতে ওর গায়ে যে ক্ষত হয় তা ও খুব দ্রুতই পুষিয়ে নেয়।আগে তো ওর ডাল বিক্রি হত।
পুকুরের ঠিক ওপারেই ওর স্বজাতের আরও কয়েকটি গাছ আছে।ভরাট বর্ষায় ট্রলারে করে বিক্রি হওয়া ডাল কেটে নিয়ে যেত ব্যবসায়ীরা।এখন তো ঠিক মত পানিই হয় না।আর যেবার একটু বা পানি হয় কিন্তু ট্রলার চলার মত পথঘাট কি আর আগের মত আছে? এদিকে সড়ক,ওদিকে বাঁধ।কোনটা আধ ডোবা,কোনটা জাগনা।বর্ষায় তো আগে সব কিছু নৌপথেই হত।সেদিন এখন গত হয়েছে।সামনে আরও হবে।আমিও চাই হোক।সব ধানী জমি বাড়ি হয়ে যাক।পুকুর গুলো বালুতে খাক।তার চারপাশে রাস্তা গজাক।প্রথমে কাঁচা,তারপর লাল ইট বিছানো,তারপর পিচঢালা। আর বাড়িতে বাড়িতে ইট-পাথরের দালান-কোঠা।ধানটানের কোন দাম আছে?আলুর কোন দাম আছে?রাস্তার দাম আছে,বাড়ির দাম আছে,দালান-কোঠার দাম আছে।সংসদ ভবনের সামনের ধান ক্ষেতের ছবি দেখে আজ যেমন আমাদের চক্ষু চড়কগাছ হয় ঠিক তেমনি ৫০ বছর পরে আমাদের উত্তরসুরীরা গ্রামের ছবি দেখে বিষ্মিত হবে। সে হবে ক্ষণ। আমি একটু গাছটার দিকে নজর দেই।ওর গায়ের নতুন পাতাগুলো বেশ খয়েরী আর তুলতুলে হয়। ভরদুপুরে নবীন পাতাগুলো নেতিয়ে পরে।দু’একটা পাতার অর্ধাংশ ভেঙে পরেও যায়।আস্তেধীরে সেই কচি খয়েরী পাতা গাঢ় সবুজ হয়। ওর পাতার নেই কোন ঔষধি গুন।তবে ওর ডাল ছেটে পাতাসহ যদি ডিঙ্গি নৌকার গুড়ার ফাকে ফাকে দিয়ে শুকনা মৌসুমে পুকুরে ডুবিয়ে রাখি, তাতে বেশ ক’দিন পরে ভালো খলসে আর কই মাছ পরে।
পনেরো দিন পর পর তুলে সেই মাছে আমাদের দু’দিন চলে যায়।কিন্তু ইদানীং মাছের বড্ড অভাব।তার জন্য দায়ী আমাদের স্বভাব। তো সে গাছটার পাতার এই একটা গুন।মাছেরা এর পাতার গন্ধ ভালোবাসে।ভালোবেসে আত্মাহুতি দেয়।তাই পুকুরেও ফেলি ক’টা ডাল।গত বিশ বছর ধরেই গাছটা প্রায় একই আকারে আছে।শুধু ডালের প্রয়োজন হলে আমরা যাই ওর কাছে।আমাদের রান্নার যত উচ্ছিষ্ট আর কোটনা-বাটনার যত ছাল-বাকল সব ওর দিকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারি।এতে যে ওর গোড়ায় পুষ্টি হবে সেই নিয়তে কিন্তু দেই না।ও হল আমাদের বাড়ির শেষ সীমানার পুকুর পাড়ে জন্মানো একটা আগাছা।ওর পরে আর কোন বসতি নেই।ওর গায়ে ময়লা ছাড়া কখনও পানি ফেলিনি। ছোট বেলায় হয়তো ওর গোড়ায় পেচ্ছাব করেছি।হ্যাঁ উত্তরের ঝড়ের ঝাপটার কিছুটা ও শুষে নেয় সত্যি।আগে তো বেশ বড় একটা রেইন ট্রি ছিল।এখন তাও নেই।তাই ঝোড়ো বাতাসটা পোড় খাওয়া গাছটাই আগে গিলে।ওকে চিরে যে ঘরের কোন আসবাব বানাবো তার কি জো আছে?ওর গুড়ি দিয়ে মাটির চুলার লাকড়িই কেবল হয়।ঘরের জানালা,দরজা,আড়া,পাইর,উবি,পেট্টি,দৌড়,নৌকার মাচাল,চৌকি,পিড়ি,চেয়ার,টেবিল কিচ্ছুটি বানাতে ওর কাঠ কাজে আসে না।ওর কাঠ শুধু উনুনের লাকড়ি হয়ে দাউদাউ জ্বলে।তাই ওকে কাটার নামও নেই না আমরা।আছে,থাক ওর মত।কে ওর দিকে নজর দেয়!
কিন্তু বর্ষার প্রারম্ভে যখন সন্ধ্যে নামার কালে ঘরে এসে উত্তরের দরজা-জানালা খুলি একটু ঠান্ডা হাওয়া পেতে, তখন কী জানি একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগে!ছোট ছোট হেঁচকা টানে বাতাস টেনে গন্ধ টাকে আরও ভালো ভাবে নেই।এমন মিষ্টি গন্ধ তো শখের করা বাগানেরও সব ফুল দেয় না।জবার কোন গন্ধ নেই,এত যে রঙ্গণ রঙ্গণ করি তার কোন গন্ধ নেই,রাধাচূড়ার গন্ধ নেই।রঙিন ফুলের নাকি গন্ধ এমনিতেই কম থাকে।রঙই ওর শক্তি কিন্তু উত্তরের গাছটার ফুলও তো রঙিন। কিন্তু ওর কদর নেই।বঁইচি ফুলের মালার নাম শুনেছি, বকুল ফুলের মালা তো বিক্রি হয়,শিউলির মালা হাতে নিয়ে তো ফ্রক পরা ছোট্ট ছোট্ট মেয়েগুলো টিএসসি আর ডায়াচের সামনে বেশ বিরক্ত করে।কিন্তু উত্তরের গাছটার ফুল দিয়ে মালা গাথতে সুতারও প্রয়োজন হবে না।দুই সারি ফুল জুড়ে দিলেই মালা হয়ে যাবে।কিন্তু কেউ ওর মালা বেঁচে না।আর কেউ তার প্রেয়সীকে এই মালা কিনেও দিবে বলে মনে হয় না।কিন্তু এই গাছটি যদি উঠোনের পাশে হত তবে সকালে ওর ঝড়ে পরা ফুলে ওর নিচটা দেখার মত হত।
আমাদের ঘর ছাড়িয়ে, পুকুর ছাড়িয়ে আরও বড় একটা পুকুর। সেই পুকুরের এক কোনায় আরেকটি গাছ আছে।আমাদেরটার ফুল পরে জঙ্গলে আর ওটার ফুল পরে পানিতে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পানিতে বিছানো লাল চাদর। এই যে গাছটা যার নেই কোন আদর,নেই কোন কদর। যার ফুলের নেই কোন দর।সেই গাছটি কিন্তু ফি বছর ফুল দিতে একটুও ভুল করে না।উত্তরের বাতাসে তার ফুলের গন্ধে আমাদের ঘরটা ম ম করে। গাছটার নাম হিজল। কিছু কিছু মানুষের জীবন হিজলের মত।
Drugs used in medicine generally are divided into classes or groups on the basis of their uses, their chemical structures, or their mechanisms of action buy priligy online usa
priligy reviews were likely to lower its operating profits by Г‚ 8m