বিয়ে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা

মানুষের মূর্ত আবিস্কারের মধ্যে আগুন,চাকা,ইঞ্জিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে মানুষের বিমূর্ত আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভাষা আর বিয়ে। বিয়ে হলো এক প্রকারের চুক্তি যেখানে নারী ও পুরুষ একত্রবাসের জন্য সম্মত হয়।।আবার বিয়ে নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। বিয়ের ইংরেজি ‘Marriage ‘ কোথা থেকে আসলো তা বলতে গেলে সেই পুরাতন কাসুন্দি আবার ঘাটতে হবে এবং দেখা যাবে তা একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে। তারচেয়ে বাংলা “বিবাহ ” শব্দ নিয়ে কচকচানি করি।বহ(হসন্ত) ধাতুর পূর্বে বি উপসর্গ যুক্ত হয়ে বিবাহ শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে। বহ মানে “ভার বহন করা” আর বি মানে “বিশেষভাবে”।মানে দাড়ালো বিয়ে মানে “বিশেষভাবে ভারবহন করা। এখন কে কাকে বিশেষভাবে ভার হিসেবে বহন করছে তার উত্তরে আমি লা জবাব।পাঠকগণকেই এর মীমাংসার দায়িত্ব দিলাম।

এতো গেল অর্থের কথা।এবার অনর্থের কথায় আসি।কে বা কারা যেন গবেষণা করে বের করেছে যে ঢাকা শহরে গড়ে প্রতিদিন ৩৯ টা করে বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে। চিন্তিত হবার মত ব্যাপার।বিবাহ যেদিন আবিষ্কার হয়েছিল ঠিক সেদিনই বিবাহবিচ্ছেদ আবিষ্কৃত না হলেও পরবর্তীতে মানুষ ঠিকই এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পারে।তাই যখন দেখলো বৈবাহিক সম্পর্ক আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না তখন বিচ্ছেদই উত্তম।বিবাহবিচ্ছেদ এর ইংরেজি ” ডিভোর্স ” ও সেই ল্যাটিন থেকেই আসছে।মোটামুটি ১৭৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনের রাজা হাম্বুরাবির আমলে বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত আইনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

বিয়ের মত একটা সুশৃঙ্খল ব্যাপার মানুষ কবে আবিষ্কার করেছিল তার সঠিক সন-তারিখ হয়তো বলা যাবে না।তবে গবেষকগণ মনে করেন খ্রীস্টপূর্ব ৪৩৫০ সাল থেকে বিয়ে প্রথা চলে আসছে।আর বৈবাহিক অনুষ্ঠানের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রীস্টপূর্ব ২৩৫০ সালে মেসোপোটেমিয়াতে।তৎপরবর্তী কয়েকশত বছরে প্রাচীন হিব্রু, গ্রীক ও রোমানদের মাঝে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।তার পূর্বে বিয়ের তেমন কোন গুরুত্ব ছিল না ধর্ম অথবা ভালোবাসার ক্ষেত্রে। বিয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল পুরুষ ও মহিলার শারীরিক সম্পর্ককে সামাজিক স্বীকৃতি দেয়া এবং সন্তানদের বায়োলজিকাল পিতা-মাতার নিশ্চয়তা দেয়া।বিয়ে সেই উদ্দেশ্য এখনও অত্যন্ত সফলতার সাথে পূরণ করে যাচ্ছে।কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের শারীরিক চাহিদার পাশাপাশি মানসিক চাহিদার গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতিতে অন্যান্য প্রাণিদের মাঝে বৈবাহিক রীতি না থাকলেও স্বল্প ও দীর্ঘ সময়ের জন্য তারা পরিবার গঠন করে।যেমন মা মাছ তার সন্তানদের বড় হওয়া পর্যন্ত আগলে রাখে।পাখিরাও বাচ্চাদের স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত দেখভাল করে।কিন্তু এপ বা বানরসদৃস প্রাণিদের মাঝে পারাবারিক বন্ধন আরো দীর্ঘস্থায়ী হয়।আসলে প্রাণিদের সন্তানদের প্রাপ্তবয়স্ক হবার সমসীমার উপর পারিবারিক বন্ধন নির্ভর করে।এপ জাতীয় প্রাণিদের সন্তানেরা প্রায় ১০ বছর খাদ্যের জন্য বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীল থাকে।এই দশ বছর সে বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকে।কিন্তু মানব সন্তানদের প্রায় বিশ বছর বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়।তাই প্রাকৃতিক ভাবেই মানবকূলের পারিবারিক বন্ধন লম্বা।সেটাকে মানুষ নিজের ইচ্ছার দ্বারা আর রীতিনীতির দ্বারা আরও দীর্ঘায়িত করেছে।

বিবাহ প্রথা এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের বিবাহ চালু আছে।তবে একজন স্ত্রী আর একজন পুরুষের মাধ্যমে যে একগামীতা সেটাই সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু গবেষকগণ বলে থাকেন যে প্রাণিজগতের আর দশটা প্রাণির মতই মানুষ জীনগতভাবেই বহুগামিতা বহন করে।একইভাবে মানুষ জীনগতভাবে ধর্ষকামী। তবে মানুষ অন্যান্য প্রাণিদের থেকে আলাদা এই কারণেই যে মানুষই একমাত্র প্রাণী যে তার উদ্ভব, বিকাশ,পৃথিবীতে তার অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে ভাবে।তাই সচেতন ভাবে মানুষ নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।জীনগত কারণে যেসব অশোভন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সে বহন করে তাকে লজিকাল মনের দ্বারা অবদমন করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer