দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি উন্নত ও বৈষম্যহীন ব্রডকাস্টিং সার্ভিস বিনির্মাণে বাংলাদেশ বেতার, বৈষম্যবিরোধী সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত বাংলাদেশ বেতারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিল্পী এবং কলা-কুশলীদের নিয়ে এক আলোচনা সভা ০৮.০৮.২০২৪ তারিখ বিকাল ৩.০০ মিনিটে বাংলাদেশ বেতার ঢাকা কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী গণ অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দেয়া সকল বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং একইসাথে তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়। এছাড়া এ আন্দোলনে আহত সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়। আলোচনায় বাংলাদেশ বেতারের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা এবং একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ বেতারকে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য জাতীয় গণমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ বেতারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ বেতারের চলমান বৈষম্য নিরসন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করা না গেলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মূল যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়িত হবে না। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বেতার বৈষম্য বিরোধী সমন্বয় কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নিম্নোক্ত দাবীসমূহ উত্থাপন করছে।
১. বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন গ্রেডে কর্মকর্তারা পদোন্নতি বঞ্চিত। উল্লেখ্য অনুষ্ঠান বিভাগের ৬ষ্ঠ গ্রেডের অধিকাংশ কর্মকর্তা ১৪ বছরের অধিক এবং নবম গ্রেডের অধিকাংশ কর্মকর্তা প্রায় ৮ থেকে ১৪ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত। উল্লেখ্য এই গ্রেডের কর্মকর্তারা তাদের প্রথম প্রমোশনই পাননি। সেক্ষেত্রে অনুষ্ঠান ও বার্তা বিভাগের এসব পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক প্রশাসন ক্যাডারের সম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির তারিখ থেকে ভুতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদাণ করা। পদ না থাকলে বা পদ সৃজন হওয়ার আগ পর্যন্ত ভুতাপেক্ষ ইনসিটু পদে পদোন্নতি প্রদান করা।
২. উপসচিব পদে আবেদন প্রেরণের ক্ষেত্রে বেতারকে একটি অফিস ধরে সাধারণ ক্যাডার অনুষ্ঠান (১২২), বার্তা (১২৩) এবং টেকনিক্যাল ক্যাডার প্রকৌশল (৫৩০) এই ৩টি ক্যাডার থেকে (যাদের মোট ভিত্তি পদ ৩২৩ টি) থেকে মোট ১০ জন মনোনয়ন দেয়া হলেও নিদারুণ বৈষম্যের নজির স্থাপন করে তথ্য সাবক্যাডার, গণযোগাযোগ/পিআইডি (কোড ১২১) কে আলাদা ক্যাডার ধরে (যাদের ভিত্তি পদ মাত্র ১৩৬ টি) শুধু তাদের থেকে এককভাবে ১০ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ফলাফল হিসেবে গত ১০ বছরে ১২১ কোড থেকে ২৪ জন, ১২২ কোড থেকে মাত্র ০৬ জন, ১২৩ কোড থেকে ৮ জন এবং ৫৩০ কোড থেকে ১১ জন উপসচিব হয়েছে। যা চূড়ান্ত বৈষম্যের শামিল। প্রেক্ষিতে বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের চারটি সাব ক্যাডার থেকেই সমহারে উপসচিব এর আবেদন গ্রহণ করা।
৩. বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদে সরাসরি বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা।
৪. বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান নিয়ে সম্প্রচার ক্যাডার বাস্তবায়ন / বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের ৩ টি উইংকে একিভূত করা এবং অদূর ভবিষ্যতে বিটিভিকে এই ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা।
বাংলাদেশ বেতারের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী, শিল্পী, কলাকুশলী দিন রাত পরিশ্রম করে মানুষের মাঝে তথ্য সবরাহ করে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কারফিউ, জরুরি অবস্থা, আন্দোলন সংগ্রাম, কোন অবস্থাতে বসে নেই বেতার কর্মীরা। বেতার কর্মীরা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠণে অংগীকারবদ্ধ। এ কাজ আরো সুচারুরুপে করার জন্য বেতার কর্মীরা সকলে সহযোগিতা কামনা করছে।
সব শেষে ছাত্র-জনতার রাষ্ট্র মেরামতের যুগোপযোগী দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করছে বাংলাদেশ বেতার এবং এ কাজে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে বেতার কর্মীরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।