বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের শেষ কোথায়

বিশ্বজুড়েই গণমাধ্যমের দাপট। গণমাধ্যম আপনার-আমার সম্মুখে যা উপস্থাপন করে আমাদেরকে তাই দেখতে হয়, পড়তে হয় এবং হজম করতে হয়। অল্পকিছু সচেতন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সবাই এই সারিতেই অবস্থান করে। এমনকি গণমাধ্যমের কর্মীরাও এর বাইরে নয়। তারা আবার পশ্চিমা বিশ্বসহ উন্নত দেশের গণমাধ্যমের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো একটু বেশিই নির্ভরশীল। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে।

দেখা যায়- বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটা গণমাধ্যমই সিএনএন, আল-জাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, টেলিগ্রাফসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমের সংবাদই কাট, কপি, পেস্ট এবং অনুবাদ করে জনগণের সামনে তুলে ধরছে। ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে বিদেশি টিভি চ্যানেল এবং পত্রিকার সংবাদগুলো এখন অনায়াসেই আমাদের হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে- যে সংবাদটা এক্ষুনি বিদেশি পত্রিকায় পড়লাম, একটু পরে সেই সংবাদটাই আমাদের পত্রিকাগুলোতে পাচ্ছি। পার্থক্যটা কেবল ভাষাগত।

তাহলে আমাদের গণমাধ্যমগুলোর সৃজনশীলতা কোথায়! এই ইউক্রেন সংকটের কথাই ধরুণ না! পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো তুলে ধরেছে- রাশিয়া দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র, রাশিয়া পৃথিবীর জন্য হুমকি, ইউক্রেনে রাশিয়ার হাজার হাজার সেনা নিহত হয়েছে, রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনে আত্মসমর্পণ করেছে, ইউক্রেনে রাশিয়া পরাজিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি পুতিনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নতুন নতুন তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে যেমন -পুতিন ছিলো কিশোর গ্যাং এর সদস্য, তার বাবা-দাদা ছিলো বাবুর্চি, পুতিন নিজে ছিলো অসভ্য মুচির দোকানি, কোভিড পরবর্তী সময়ে তার মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের গণমাধ্যমগুলোতেও তাই উঠে এসেছে।

পশ্চিমা বিশ্ব তাকে বলছে নব্য হিটলার, আমরাও তাকে তাই বলছি। অথচ আমরা নিরপেক্ষ এবং সৃজনশীল সংবাদের অপেক্ষায় থাকি প্রতিনিয়ত। রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে হামলা অবৈধ এবং অবশ্যই নিন্দনীয়। ২০০১ সালে যখন পশ্চিমারা আফগানিস্তানে হামলা করে, ২০০৩ সালে যখন ইরাকে হামলা করে, ২০১১ সালে যখন লিবিয়ায় হামলা করে তখনও তা অবৈধ এবং দখলদারিত্বই ছিলো। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এই হামলা এবং দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়ার জন্য যে সংবাদ পরিবেশন করতো, আমাদের গণমাধ্যমেও তাই আসতো। এখন রাশিয়া ইউক্রেনে যা করছে; পশ্চিমারা আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া এবং ফিলিস্তিনেও তাই করেছে। পার্থক্য শুধু স্থান, কাল আর পাত্র।

ইউক্রেন সংকটের জের ধরে রাশিয়াকে উয়েফা, ফিফা এবং আইওসি’র সকল খেলা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পশ্চিমাদের কিন্তু আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ফিলিস্তিন হামলার কারণে বহিষ্কৃত হতে হয়নি। আজ সারাবিশ্ব যেভাবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দেশে দেশে বিক্ষোভ করছে, শান্তি মিছিল করছে; পূর্বে কিন্তু এইভাবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিল হয়নি। মার্কিনীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য ইউরোপকে হাতে রাখা এবং ন্যাটোকে টিকিয়ে রাখা। সেই সাথে বিশ্বব্যাপী তাদের শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলোর বিচরণ। আর রাশিয়া এখানেই ব্যর্থ। চীন এবং রাশিয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী গণমাধ্যম তৈরির কোনো বিকল্প নেই। আমি অবশ্যই যুদ্ধের বিপক্ষে, শান্তির পক্ষে। তবে শান্তির চাওয়াটা হোক সবার জন্য, মানবতার জন্য। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা অঞ্চলের জন্য না হোক।

মহসিন খান

লেখক ও প্রাবন্ধিক

Related Posts

  • ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে ড. ইউনূস সরকার

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দুর্নীতির চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশের অবস্থান নাজুক। আফগানিস্তান ছাড়া এ অঞ্চলের সব দেশের চেয়ে বাংলাদেশে দুর্নীতির হার বেশি।

  • এপ্রিল ১০, ২০২৩
বাঙালী এবাদতে সৎ, কর্মে অসৎ

জাতিগতভাবে বাঙালীদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে দেশের প্রসিদ্ধ দার্শনিকরাও কিছুটা স্তম্ভিত হয়েছেন। আহমদ সফা ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ প্রবন্ধে বাঙালী মুসলমান সমন্ধে বলেন, “ইসলামও যে একটা উন্নততর দীপ্ত ধারার

One thought on “বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের শেষ কোথায়

  1. Hi! Do you know if they make any plugins to help with Search Engine Optimization? I’m trying to get my
    blog to rank for some targeted keywords but I’m not seeing very good success.
    If you know of any please share. Kudos! I saw similar article here: Change your life

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর নতুন কমিটি: সভাপতি বিথী, সচিব রাশিম

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর নতুন কমিটি: সভাপতি বিথী, সচিব রাশিম

ধর্ষকের বিচার দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসছে দেশ

ধর্ষকের বিচার দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসছে দেশ

আরেফিন সিদ্দিকের অবস্থার আরও অবনতি, আশা দেখছেন না চিকিৎসকরা

আরেফিন সিদ্দিকের অবস্থার আরও অবনতি, আশা দেখছেন না চিকিৎসকরা

শোয়েব আখতারের কাছ থেকে শিখতে চান নাহিদ

শোয়েব আখতারের কাছ থেকে শিখতে চান নাহিদ

র‌্যাব নিয়ে যেসব সুপারিশ করলো সংস্কার কমিশন

র‌্যাব নিয়ে যেসব সুপারিশ করলো সংস্কার কমিশন

৪ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রার্থীর বয়স ২১ করার সুপারিশ

৪ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রার্থীর বয়স ২১ করার সুপারিশ