নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ৪ ট্রাস্টি কারাগারে

0
96

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ৪ ট্রাস্টিকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ আত্মসাতের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। শাহবাগ থানা পুলিশ সোমবার চার আসামিকে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে হাজির করলে বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে চার আসামিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদেরও অনুমতি দিয়েছেন বিচারক। দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলার এই চার আসামি হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান।

তাদের মধ্যে মিউচুয়াল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক। রেমন্ড গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি ও সিইসি বেনজীর আহমেদ এক সময় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ছিলেন। রেহানা রহমান বেঙ্গল ট্রেডওয়েজের এমডি। আর মোহাম্মদ শাহজাহান শাহ ফতেউল্লাহ টেক্সটাইল মিলস এবং জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলসের এমডি।

আগাম জামিন চেয়ে তারা হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন। দুই দিন শুনানি করে রোববার তা সরাসরি খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করে আদালত। সেই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদেরকে বিচারিক আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

সোমবার জজ আদালতে হাজির করার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নতুন করে জামিন আবেদন করেননি। তবে তদন্ত কর্মকর্তা কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করলে এর বিরোধিতা করে যুক্তি দেন তারা। আসামিদের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন তার মক্কেলদের কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার আর্জি জানান। তিনি বলেন, “যেহেতু এ মামলায় পুনরায় কোনো জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়েজন নেই। তথ্য উপাত্ত সবই মামলার কাগজে রয়েছে। তাদের সবাই প্রবীণ ও বৃদ্ধ ব্যক্তি।একজনের বয়স ৯২। জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলে তারা হেনস্তার শিকার হবেন। তারা ব্যক্তিস্বার্থে কোনো কাজ করেননি, করেছেন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে।

আসামি বেনজীরের আইনজীবী বোরহান বলেন, “তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। শিক্ষা, বাণিজ্য ও শিল্পখাতে তার বিশাল অবদান রয়েছে।” এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, “এই চারজন উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন আগাম জামিনের জন্য। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে উচ্চ আদালত তাদের সে আবেদন নামঞ্জুর করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনশ তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নিজেদের স্বার্থ তারা হাসিল করেছেন। মামলায় আসামির তালিকায় আরো দুইজনের নাম রয়েছে। তারা এখন পলাতক।”

রেহেনা রহমানের পক্ষে আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি বলেন, “শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে এ মামলা করা হয়েছে। অনুমোদনের ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং মামলা হয় না। আর দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা হচ্ছে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আত্মসাতের অভিযোগ। এখানে কোনো অভিযুক্তই সরকারি কর্মচারী নন। বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।”

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীর করা এ মামলায় ট্রাস্টি বোর্ডের ওই চার সদস্য ছাড়াও চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালীকে আসামি করা হয়।

এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিক্রেতার নিকট থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরবর্তীতে নিজেরা উক্ত এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

“অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য উক্ত অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তর মাধ্যমে আসামিরা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেন।”

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here