ডায়াবেটিস কেন হয়? লক্ষণগুলো কী? ডায়াবেটিস বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত রোগগুলির একটি। বিশ্বের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত।
আমরা যখন খাবার খাই, তখন আমাদের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো, যে খাবার খাচ্ছি, সেটার অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকে আমরা ডায়াবেটিস বলছি। খালি পেটে যদি গ্লুকোজের মাত্রা ৭-এর বেশি থাকে আর খাওয়ার পর যদি ১১-এর বেশি থাকে, তখন সেই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সবাই বুঝতে পারে। হঠাৎ করে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। ওজন কমে যায়। সমস্যা হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের বেলায়। তাঁরা বুঝতেই পারেন না যে তাঁদের ডায়াবেটিস আছে। বারবার প্রস্রাব করা, খাবার খেয়েও ক্ষুধা না মেটা, ক্লান্ত লাগা, ঝিম ধরা ভাব, কোথাও কেটে গেলে বা ঘা হলে সহজে সেটা না শুকানো—এ রকম কিছু লক্ষণ থাকে। যেহেতু তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যান না, তাই তিন-চার বছরে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। দেখা গেল, চোখে রক্ত জমেছে। হার্টে ব্লক, যকৃতে ক্রিয়েটিনিন বেশি।
ওজনের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক কী?
সরাসরি বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক আছে, এমন বলা যাবে না। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাঁরা ফাস্ট ফুড খেতে ভালোবাসেন। শুয়ে-বসে সময় কাটান, ওজন বেশি। এ কারণে তাঁদের শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধক বেড়ে যায়। ফলে ইনসুলিন নিঃসরণ হলেও সেটা কাজ করতে পারে না। তাই টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা প্রবল থাকবে। বডি-মাস-ইনডেক্স ঠিক রাখা খুবই জরুরি। আর পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও জিনগত ভূমিকা বা জেনেটিক রোলের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি। একটি হলো জিনগত ভূমিকা, আরেকটি হলো জীবনযাপন বা লাইফস্টাইল। বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস আছে মানে, আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বেশি। আর জীবনযাপন যদি স্বাস্থ্যকর না হয়, সে ক্ষেত্রে আরও ৫০ শতাংশ। মানে শতভাগ। ঘরের কাজ, অফিসের কাজ, যা-ই থাকুক না কেন, ব্যায়ামের বিকল্প নেই। প্রতি সেকেন্ডে দুই পা হাঁটতে হবে। জোরে জোরে প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটতে হবে।
‘ডিজিটাল হসপিটাল লাইভ: হ্যালো ডক্টর’- এ কথা বলছেন ডা. মো. ফিরোজ আমিন, সঞ্চালনা করেন ডা. শ্রাবণ্য তৌহিদা (বায়ে)
ডায়াবেটিস হলে করব কী?
চারটি করণীয়। মুখে সেবন করা ওষুধ, ইনসুলিন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মানসিক সমর্থন। এগুলো খুবই জরুরি। ড্রাগ (ওষুধ), ডায়েট, শৃঙ্খলা (ডিসিপ্লিন)—এগুলো জরুরি। জীবনযাপন ঠিক রাখতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত চেকআপও করতে হবে। বাসায় গ্লুকোমিটার রেখে নিয়মিত মাপতে হবে। ডায়াবেটিস হওয়ার পর যদি কোনো রোগী এসব মেনে খাওয়ার আগে পাঁচ থেকে ছয় আর খাওয়ার পরে দশের নিচে রাখতে পারেন, তাহলে ভালো। তিনি দীর্ঘ সময় ডায়াবেটিস নিয়ে সুস্থ থাকবেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবারের সমর্থন খুবই জরুরি।