ট্রায়াল অব ট্রুথ

0
28

১৬৩৩ সাল, বিচারের কাঠগড়ায় ষাটোর্ধ বৃদ্ধ। অপরাধ মারাত্মক।এত দিন রোমান ক্যাথলিক চার্চ মানুষকে শিক্ষা দিয়ে এসেছে যে, এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে পৃথিবী। আকাশের আর সব কিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে।খালি চোখে মানুষ দেখেও তাই।তাছাড়া এরিস্টটল, টলেমীর মত দুদে বিজ্ঞানীরাও তেমনটাই জানতেন।মাঝে কোপারনিকাস, আর জিওদার্নো ব্রুনোর মতো লোকেরা উল্টাপাল্টা কিছু বলেছিল কিন্তু হালে পানি পায়নি। ব্রুনোকে তো তার মতবাদের জন্য পুড়িয়েই মারা হয়েছিল।

কিন্তু এবারের ভদ্রলোকটি সেই পুরোনো ঘা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আরো বড় করলেন। তিনি তার আবিষ্কৃত যন্ত্র দিয়ে মানুষের দেখার জগৎটাকে নিয়ে গেলেন স্বর্গের দ্বারপ্রান্তে। উঁকি মারলেন বৃহস্পতির চাঁদে।আবিষ্কার করলেন বৃহস্পতির চারটি চাঁদ। ভেনাসের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করলেন।সূর্যের গায়ে দেখতে পেলেন সৌরকলঙ্ক। সব শেষে সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে সূর্য। আকাশের আর আর সব কিছু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খায়। তিনি তার মতবাদের স্বপক্ষে বই ছাপলেন।কিন্তু এতে বাঁধলো যত বিপত্তি। ক্যাথলিক গুরুদের বাপদাদার ধর্ম টলটলায়মান।বাজেয়াপ্ত করা হলো তার বই।তলব করা হলো বৃদ্ধকে তার এই ধর্মবিরোধী বক্তব্যের জন্য।কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হলো। বৃদ্ধ তখন হয়তো জিউদার্নো ব্রুনোর সেই করুণ পরিণতির কথা ভাবলেন। তরুণ জিউদার্নো পেরেছিলেন তার মতে অটল থেকে প্রাণ উৎসর্গ করতে। কিন্তু এই বয়োবৃদ্ধ লোক তা পারবেন কেনো। তাই চার্চের কথাই মেনে নিয়ে আপাতত মৃত্যু কে এড়িয়ে গেলেন বৃদ্ধ ।

কিন্তু সিদ্ধান্ত এলো বাকী জীবন তাকে গৃহান্তরীণ হয়েই কাটাতে হবে।কথিত আছে আদালতের কক্ষ থেকে বের হবার সময় বৃদ্ধ গ্যালিলিও বিড়বিড় করে কিছু আওড়াচ্ছিলেন।তিনি নাকি বলছিলেন, ” তবুও এটি (পৃথিবী) ঘোরে “। গৃহে কারারুদ্ধ অবস্থাতেই তিনি ১৬৪২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। গ্যালিলিওর মৃত্যুর ৩৫০ বছর পর ভ্যাটিকানের চার্চ তাদের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং গ্যালিলিওকে নির্দোষ ঘোষণা দেয় কিন্তু ততদিনে পৃথিবী সূর্যকে ৩৫০ বার প্রদক্ষিণ করে ফেলেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here