জনপ্রিয় কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক আখতারুজ্জামান আজাদের আরও একটি চমকপ্রদ কবিতা ‘আমার বাড়ির রান্নাঘরে আড়াই লিটার তেল’। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। বিডিনিউজ ট্র্যাকারের পাঠকদের জন্য সেই কবিতাটাই তুলে ধরা হলো।
আমার বাড়ির রান্নাঘরে আড়াই লিটার তেল
– আখতারুজ্জামান আজাদ
— ফকির হয়ে সাহস এত, করব কী আজ তোরে;
করব গুলি, উড়বে খুলি, পাঠিয়ে দেবো গোরে!
নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, হারামজাদার জাত;
বামন হয়ে চাঁদের দিকে বাড়াস কেন হাত?
কাঠুরিয়ার পুত্র হয়ে আড়াই বেলা খেয়ে
হাত বাড়ানোর সাহস দেখাস চৌধুরীদের মেয়ে!
এই ছোটলোক, জানিস কি তুই আমার মাসিক আয়?
কয়শো-হাজার কর্মচারী আমার পরে-খায়?
কয়েক পুরুষ খেলেও বসে শেষ হবে না ধন;
মুকুটবিহীন রাজা আমি, আমিই দেশের ডন।
ধনে-মানে আমার মতো রাষ্ট্রে আছে কজন?
তোদের মতো চাকর-বাকর আমার কয়েক ডজন।
ছয়টা বাঁদি আমার মেয়ের, সকাল-বিকাল সেবা;
কয়টা আছে টয়টা আমার— হিশাব রাখে কে বা!
জানিস কত খরচ করে আমার মেয়ে মাসে?
গাড়ির মডেল পালটে দিলে তবেই খানিক হাসে।
বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে করতে গেলে চিল,
খাওয়ার পরে শোধ করে সে লক্ষ টাকা বিল।
মাসের শেষে বিদেশ যাবে, বিদেশ থেকেই বাজার;
আমার মেয়ে রানির মেয়ে, আমার মেয়ে রাজার।
পারবি কি তুই কিনতে কভু একটা গাড়ির চাকা?
বংশ বেচেও পারবি দিতে লিপ স্টিকের টাকা?
রাখবি কোথায় আমার মেয়ে? আছে কি তোর কিছু?
কয় টাকাতে ছাড়বি, ফকির, আমার মেয়ের পিছু?
কে দিয়েছে সাহস তোকে ঢুকতে বাড়ির ভিতর?
কী আছে তোর? কী আছে তোর? হারামজাদা-ইতর!
আমার উপর আস্থা রাখেন, এবার থামান বলা;
গরম মাথা ঠান্ডা করেন, ছিঁড়বে না হয় গলা!
মারেন যদি, মারতে পারেন, যাবই নাহয় মরে;
রাখতে পারি জীবন বাজি ভালোবাসার জোরে।
আমরা হলাম চাকর-নফর, আপনি নাহয় মালিক;
আপনি হলেন বিরাট ইগল, আমরা নাহয় শালিক।
আজকে আমি গরিব বলে দিলেন যত গালি;
বিচার হবে, বিচার হবে, হিশাব রাখেন খালি।
আপনি আমার শ্বশুর হবেন, বাজান এবার সানাই;
আমার কাছে যেইটা আছে, আপনাদেরও তা নাই।
কম্পিটিশন লাগলে পরে মারবে সবাই ফেল,
আমার বাড়ির রান্নাঘরে আড়াই লিটার তেল!
— বলতে যদি আগেই এসব, বাহাস কি আর লাগে;
মর্মে আমি পুড়ছি, বাজান, নিজের ওপর রাগে।
আমার মেয়ের দারুণ রুচি, বলতে কি আর হবে;
বক্ষে আসো, জামাই বাবা, বিয়ের তারিখ কবে?
দুই বাংলায় সমান পরিচিত কবি আখতারুজ্জামান আজাদের প্রকাশিত বইয়ের তালিকা-