এই দেশে গর্ব করার মতন একটা মধ্যবিত্ত সমাজ ছিলো

  • প্রকাশিতঃ ৯ এপ্রিল ২০২২ ১:২০ অপরাহ্ণ

এই দেশেই গর্ব করার মত একটা মধ্যবিত্ত সমাজ ছিলো। উচ্চবিত্তরা এদেশকে রিপ্রেজেন্ট করেনি কখনই আর নিম্নবিত্তরা তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খেয়ে গেছে সারাজীবন। কিন্তু মধ্যবিত্ত সমাজ বাংলা শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ধারন করার পাশাপাশি চিন্তা ও চেতনায় বেশ আধুনিক ও প্রগতিশীলতার ধারক ছিলো। এরা বই মেলায় যেতো, নিজের বাড়িতেই দুই বাংলার সাহিত্যিকদের বইয়ের একটা ভালো সংগ্রহশালা থাকতো, এরা নাটক দেখতো, এরা পরিবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে বেড়াতো, আড্ডা দিতো।

রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মীয় আচরণ সবখানেই এদের পরিশীলিত বিচরণ ছিলো। এদের লাইফস্টাইলে অর্থের প্রাচুর্য না থাকলেও একটা সুখের প্রাচুর্যের অভাব ছিলোনা। বিগত এক যুগে এই শ্রেনীটা আস্তে আস্তে তাদের স্বকীয়তা হারাতে শুরু করলো। সেমি বাম ও মধ্যম পন্থা থেকে তারা ক্রমান্বয়ে ডানপন্থী হতে শুরু করলো। তারা তাদের নিজস্বতা ভুলে একটা অদ্ভুত, যুক্তিহীন, ক্ষেত্রবিশেষে এক্সট্রিম জীবন ব্যাবস্থায় নিজেদের পরিবর্তন করে নিলো।

একদিকে আধুনিকতার চাকচিক্য ও ঝনঝনানি, অর্থ ও ক্ষমতার লোভ- আরেকদিকে তাদের পরকালের হিসাব। তারা একই সাথে দুইটাকেই আঁকড়ে ধরতে চাইলো।
নিজের অর্জিত শিক্ষা,চিন্তা করার শক্তি,মানুষের ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ভুলে অর্থ ও ক্ষমতাকে তারা জীবনে অর্জনের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহন করে নিলো। এর জন্য কোন অন্যায় বা অপরাধকে অন্যায় বা নীতি বিরুদ্ধ কাজ না ভেবে নিজেদের সুবিধা মত এর গ্রহনযোগ্যতা দিতে শুরু করলো। আবার তার মধ্যে পরকালীন হিসেবনিকেশও ঢুকে গেলো। শুধু এই জগতে ভালো থাকলেতো চলবেনা মৃত্যুর পরে যে অসীম জীবনটা পরে আছে সেখানেও তাকে ভালো থাকতে হবে।

ইহকালের সুখ, চাকচিক্য, ক্ষমতা পাওয়ার জন্য এরা তার নীতি ও বিবেককে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে আর পকালের সুখের টিকেট পেতে তারা এক শ্রেণীর ব্যাবসায়ীদের ঠিকাদারি দিয়ে দিয়েছে। এরা ভাবে আমি নিজে যাই করিনা কেন, আমার আচরণ যাই হোকনা কেন যদি বেহেস্তের ইজারাদারদেরকে রাজি খুশি রাখতে পারি তাহলেই আমার টিকিট নিশ্চিত। নিজের করা অন্যায় কাজের দহন থেকে বাঁচতে তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে একটা মানদন্ড ঠিক করে নিয়েছে কিছু লোক দেখানো সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ।
এরা ভুলে যায় নিজের করা কর্মের ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবেনা।

আজকের বাংলাদেশের ধর্মীয় মৌলবাদের এমন উত্থানের পেছনে আমাদের এই মধ্যবিত্ত সমাজটির দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। এদেশের সবকিছুর দর্পন ছিলো এই মধ্যবিত্ত। কিন্তু আমরা আমাদের স্বকীয়তা হারিয়ে নিজেদের অস্তিত্বকেই ভুলে গিয়েছি।
আমরা আমাদের ধর্মের ইজারা এক শ্রেনীর সুবিধাবাদী ধর্ম ব্যাবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়েছি। যারা ধর্মের কথা বলে বলে নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ মানুষের মধ্যে সুচারু ভাবে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করছে। এরা যা না তাই বলে বেড়ায়, যা করা উচিত নয় তাই করে বেড়ায়।
নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে আমরা যাদেরকে নিজেদের ইহকাল ও পরকালের ইজারা দিয়ে দিচ্ছি তারা আসলেই সেটা পাবার যোগ্য কিনা সেটা ভাবার সময় এসে গেছে।

নিজেকেই জিজ্ঞেস করুন,নিজের বিবেককে কাজে লাগান। যারা নিজেরাই ঠিক নেই তারা আপনাকে সঠিক পথ কিভাবে দেখাবে!

সানজিদ বর্ণ

ফ্রিল্যান্স রাইটার

Related Posts

  • জুলাই ১৩, ২০২৩
অমরত্বের পথে সাকিব আল হাসান

অমরত্বের পথে সাকিব আল হাসান। শিরোনাম দেখে অনেকেই অবাক হতে পারেন না হওয়ারও কোন কারণে নেই। বাংলাদেশি কোন ক্রিকেটার অমরত্ব লাভ করার মত কীর্তি গড়বেন তাদের নাক সিটকানো

  • জুলাই ৯, ২০২৩
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেট ও ফুটবলের কল্যাণে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি

দিন রাত যিনি দেশের মানুষের কথা ভাবেন তিনি ক্রিকেটারদের মনের ব্যাথা বুঝবেন না তাই কি হয়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বুঝেছেন এবং দেশের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। মাশরাফি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

শোয়েব আখতারের কাছ থেকে শিখতে চান নাহিদ

শোয়েব আখতারের কাছ থেকে শিখতে চান নাহিদ

র‌্যাব নিয়ে যেসব সুপারিশ করলো সংস্কার কমিশন

র‌্যাব নিয়ে যেসব সুপারিশ করলো সংস্কার কমিশন

৪ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রার্থীর বয়স ২১ করার সুপারিশ

৪ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রার্থীর বয়স ২১ করার সুপারিশ

৭ বছর পর মা-ছেলের আলিঙ্গনে উষ্ণতায় তুষারাবৃত লন্ডন

৭ বছর পর মা-ছেলের আলিঙ্গনে উষ্ণতায় তুষারাবৃত লন্ডন

রানে ফিরেই তামিম বললেন বাউন্ডারি ছোট হয়ে গেছে

রানে ফিরেই তামিম বললেন বাউন্ডারি ছোট হয়ে গেছে

বিমানবন্দরেই দেখা হবে মা-ছেলের

বিমানবন্দরেই দেখা হবে মা-ছেলের