আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা একাদশ

4
300

আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা একাদশ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই ফুটবলপ্রেমীদের। যেকোন খেলার কথাই ধরুন সেখানে সর্বকালের সেরা একাদশ বাছাই সাধারণ কোন কাজ নয়। কারণ কয়েকটা প্রজেন্মর শতাধিক খেলোয়াড় থেকে মাত্র ১১ জনকে বেছে নেয়া মোটেও সহজ নয়। বিতর্ক থাকবেই সেসব ছাপিয়েও গ্রহনযোগ্য একটা একাদশ উঠেই আসে। আর এই কাজগুলো করেন ক্রীড়া সাংবাদিক, কোচ ও ফুটবল সংগঠকরা। আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা একাদশ বাছাইয়ের কাজটি সহজ করে দিয়েছে আর্জেন্টাইন ফুটবল এসোসিয়েশনই। ১/২ টা স্পট নিয়ে ছোট খাটো বিতর্ক থাকলেও সেটা বিশ্বের জনপ্রিয় স্পোর্টস নিউজ পোর্টাল থেকে সিনক্রনাইজ করা হয়েছে। চলুন দেখে নেই আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা ফুটবল একাদশ।

আক্রমণ ভাগঃ  মেসি- বাতিস্তুতা- কেম্পেস

লিওনেল মেসি: পেছনে বল বাড়িয়ে দিচ্ছেন ম্যারাডোনা, সামনে প্রতিপক্ষ রক্ষণকে তছনছ করে দিচ্ছেন মেসি, কল্পনাটাকে ব্যাখ্যা করতে একটা বাক্যই যথেষ্ট-এর চেয়ে মোহনীয় দৃশ্য ফুটবলে আর কিছু হতে পারত না।

মারিও কেম্পেস: ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর পথে সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুট ও সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল দুটোই জিতেছিলেন কেম্পেস। এটিই তাঁকে এই দলে জায়গা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: দলে গোলস্কোরার চাই? ‘বাতিগোল’ আছে না! টেকনিক, ফিনিশিং, হেডিং, ফ্রি কিক-নিজের সময়ের সবচেয়ে পরিপূর্ণ স্ট্রাইকার ছিলেন বাতিস্তুতা। ৫৬ গোল নিয়ে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতার সম্মানটা দীর্ঘদিন নিজের করে রাখলেও যোগ্য মানুষের (মেসি) কাছেই রেকর্ড হারিয়েছেন বাতিস্তুতা।

মিডফিল্ডঃ রিকুয়েলমে- ম্যারাডোনা- ডিমারিয়া

ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা: তাঁকে চেনানোর কিছু নেই। অধিনায়ক, নেতা, আদর্শ—ম্যারাডোনাই প্রথম ও শেষবার দেখিয়েছিলেন একা কীভাবে একটি দেশকে বিশ্বকাপ জেতানো যায়। সর্বকালের সেরা একাদশে পুরো দলের আক্রমণকে এক সুতোয় বেঁধে দেওয়ার দায়িত্বও পাচ্ছেন আর্জেন্টিনার হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলা ম্যারাডোনা।

রোমান রিকেলমেঃ প্লে-মেকার, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, ডিপ লাইং মিডফিল্ডার- যে কোনো পজিশনেই মানিয়ে নিতে পারতেন। খেলতেন মন উজাড় করে, মাথা খাটিয়ে আয়েসী ভঙ্গিতে। ম্যারাদোনার পর তাকে বলা হয় আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা মিডফিল্ডার। যে কারণে মিডফিল্ডে ম্যারাদোনার সাথে তাকে বেছে না নেয়ার কোন কারণই নেই।

অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াঃ রাইট উইংয়ে একজন গতিময় ফুটবলারের অভাববোধ ধেকেই ডি মারিয়াকে মিডফিল্ডে রাখা। যে কিনা বল নিয়ে আক্রমন ভাগেও যাবে আবার দ্রততার সাথে নেমেও আসবে। বলের উপর নিখুঁত নিয়ন্ত্রণই তাকে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা একাদশে সুযোগ পাইয়ে দিয়েছে। সেই সাথে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা খড়া কাটাতে তার অবদানের কথাও উঠে আসছে তাকে একাদশে ঠাঁই করে দেবার আলোচনায়।

রক্ষণভাগঃ  মারজোলিনি- প্যাসারেলা – রুজ্জারি – জানেত্তি

সিলভিও মারজোলিনিঃ তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের  হয়ে ২৮ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেন। তাকে দলে নেয়ার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে তিনি সেরা লেফট ব্যাক নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার হয়ে আর কোন লেফট ব্যাক নেই যিনি বিশ্বকাপে সেরার মুকুট জিতেছেন। এই যথেষ্ট তার দলে ঠাঁই পাওয়ার জন্য।

ড্যানিয়েল প্যাসারেলা: ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক। তিনটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। হল্যান্ডের ডিফেন্ডার রোনাল্ড কোম্যান তাঁর রেকর্ড ভাঙার আগ পর্যন্ত ডিফেন্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড ছিল তাঁর (৪৫১ ম্যাচে ১৩৪ গোল)।

অস্কার আলফ্রেডো রুগেরিঃ (জন্ম ২৬ জানুয়ারি ১৯৬২) একজন আর্জেন্টিনার প্রাক্তন পেশাদার ফুটবলার যিনি ডিফেন্ডার হিসাবে খেলেছিলেন। এল ক্যাবেজন (“দ্য বিগ-হেডেড ওয়ান”) ডাকনাম, রুগেরি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সাথে আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য অর্জন করেছিলেন, ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকার দুটি সংস্করণ এবং ১৯৯২ সালের রাজা ফাহদ জয়ী দলের অংশ হয়েছিলেন। ক্লাব পর্যায়ে, রুগেরির সবচেয়ে সফল কর্মকাল ছিল আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের সাথে, যেখানে তিনি 1986 সালের কোপা লিবার্তাদোরেস (এছাড়াও এই টুর্নামেন্টে ক্লাবের প্রথম জয়) ১৯৮৬ সালের কোপা ইন্টারমেরিকানা এবং ১৯৮৬ সালের ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জিতেছিলেন। বিরোধী খেলোয়াড়দের এবং বায়বীয় ক্ষমতা চিহ্নিত করার সময় তার রুক্ষ খেলার শৈলীর জন্য পরিচিত, রুগেরিকে আর্জেন্টিনা থেকে বেরিয়ে আসা সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

হাভিয়ের জানেত্তি: আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন, যা দেশের হয়ে সর্বোচ্চ। রক্ষণের দুই প্রান্তে, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে কিংবা রাইট উইংয়ে—জানেত্তি সব জায়গাতেই ছিলেন সমান পারদর্শী। দুটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। এ পর্যন্ত যতগুলো জার্নালে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা ফুটবল একাদশ সাজানো হয়েছে তার প্রতিটিতেই জায়গা পেয়েছেন হাভিয়ের জানেত্তি।

গোলরক্ষকঃ

উবালদো ফিলোল: আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৭৪,১৯৭৮ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপে খেলেছেন।’ ৭৮ বিশ্বকাপে হয়েছিলেন সেরা গোলরক্ষক। আকাশি-নীল জার্সিতে ৫৮টি ম্যাচ খেলা এই গোলরক্ষকের নামেই বর্তমান সময়ের আর্জেন্টাইন প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারের নাম দেওয়া হয়েছে—‘উবালদো ফিলোল অ্যাওয়ার্ড’।

কেন আলফ্রেড ডি স্টেফানো দলে নেই?

স্বাভাবিক কারণেই এই প্রশ্নটি করা হচ্ছে এবং হবে। এর সবচেয়ে সহজ উত্তর হলো আলফ্রেড ডি স্টেফানো ক্লাব তথা রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে যত অর্জন করেছেন তার কিছু তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে করতে পারেন নি। রেকর্ড পরিসংখ্যানে তাই আক্রমণ ভাগে মেসি-বাতিুস্ততা আর ১৯৭৮ বিশ্বকাপের মহানায়ক মারিও ক্যাম্পেসকেই আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা একাদশে সুযোগ করে দিয়েছে।

সূত্র: এএফএ, এএস।

পাঠক, এই একাদশে কোন পজিশনে কাকে নিলে ভালো হতো বলে মনে করেন বা কার থাকা উচিৎ আর কার থাকা উচিৎ নয়। কমেন্ট করে অভিমত শেয়ার করুন।

4 COMMENTS

  1. দুটো কোপা ও একটা বিশ্বকাপে অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্যে মার্টিনেজ সেরা গোলরক্ষক। যে না থাকলে বিশ্বকাপ ফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনাল এবং কোপার কোয়ার্টার ফাইনাল ও ফাইনাল জয় সম্ভব ছিল না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here