ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান আত্মহত্যা করেন গতকাল। অসম্ভব রকমের মেধাবী মেহেদী হাসান যে আত্মহত্যা করতে পারেন তা কেউই বিশ্বাস করছে না।
আমি যেহেতু আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সংগঠনের সাথে জড়িত এবং একজন সাংবাদিক তাই নিজে থেকেই তার আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ খোঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। এজন্য তার বেশকিছু সহপাঠীর সাথে কথাও বলেছি। সবাই তাকে এক বাক্যে অসাধারণ, অমায়িক এবং বিনয়ীর সার্টিফিকেট দিয়েছেন। ৩ টি প্রথম শ্রেণীর ও ৩ টি দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরি পাবার পরও সে আত্মহত্যা করেছেন মেহেদী। এর আগে যতগুলো আত্মহত্যার কেস স্টাডি ঘেটেছি তার প্রায় প্রতিটিতেই বেকারত্ব নয় রিলেশনশিপ জনিত কারণ ছিলো। মেহেদীর বেলায় ঘটলো ব্যতিক্রম কিছু। কারণ খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে তার ফেসবুক পোস্ট থেকেই পেলাম ৪০তম বিসিএসকে সে পাখির চোখ করেছিলো। সে নিয়ে ভাইবার পর একটা পোস্টও করেছিলেন মেহেদী। যেখানে তিনি লিখেছিলেন ‘আশা করবো এখানে( পিএসসিতে) এটাই আমার শেষ।
একমাস আগে সেই ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত রেজাল্ট বের হয়। সেখানে নিজেকে ক্যাডার হিসেবে দেখতে না পেয়ে চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়তে পারেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন। গত একটি মাস নিজেই নিজের সাথে যুদ্ধ করছিলেন। হয়তো তাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দেবার মতন কেউ ছিলো না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সুফিল নামের একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ‘ মেহেদী আমার খুব কাছের ছোট ভাই। বিসিএস হতাশাটাকে বড় করে দেখছি না কারণ তার বিষন্নতার জন্য আরও কিছু কারণ ছিলো। সে ছোট বেলায় তার বাবাকে হারান এরপর গতবছর মা’কে হারানোর পর থেকে গত ৬ মাস ধরে সে ঘুমাতে পারছিলো না। বলতে পারেন তার মধ্যে নিদ্রাহীনতার সমস্যাটা প্রকট হয়ে গিয়েছিলো। গতকাল তার অফিসে যাবার কথা ছিলো। সেখানে না গিয়ে তার পুরাতন মেসে গিয়ে কেনই যে হুট করে আত্মহত্যা করলো আমাদের মাথাতেই আসছে না।’
মেহেদি হাসানের আত্মহত্যা পেছনে হয়ত ক্যাডার হবার আক্ষেপ নাও কাজ করতে পারে কিন্তু এই যে বিসিএস ক্যাডার না হলে তুমি শেষ এই অসুস্থ ধারণা কারা প্রতিষ্ঠিত করেছে? আমাদের পঁচে যাওয়া সমাজইতো। তারা কি জানেন- অনেক সময়ই যারা ক্যাডার হন তাদের চেয়ে রিটেনে ১০/২০ নম্বর বেশি পেয়েও নন ক্যাডার হন অনেকেই। তাতে কি ঐ ননক্যাডার ব্যক্তির মেধা কমে গেলো? শুধু ক্যাডার দিয়ে আপনি মেধার বিচার করতে পারবেন না। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে সামনে। এই অসুস্থ চিন্তার জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্রকেও পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্যাডার নন ক্যাডার দূরত্ব কমাতে হবে। এখানে মেধার পার্থক্যটা খুবই মার্জিনাল। এজন্য আপনি কাউকে রাজা আর কাউকে প্রজার মত পরিবেশ দিতে পারেন না। সবাই ইস্পাত কঠিন দৃঢ়চেতা হয়ে জন্মান না। সবাই ব্যর্থতাকে হাসিমুখে মেনে নিতেও পারেন না।
মেহেদী হাসানের বন্ধুদের একটা অংশ আবার বলছেন বিষন্নতা আর সীমাহীন নিদ্রাহীনতা থেকে বাঁচতেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন মেহেদী হাসান। কারণ যেটাই হোক মেহেদী হাসানদের বাঁচাতে সবার আগে অসুস্থ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরী। এই সমাজ কেবল এডমিন, পুলিশদেরকে নিয়েই মেতে থাকবে সেই জায়গা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সবাইকে সমান মর্যাদা দেয়া ও জরুরী হয়ে গেছে। বিসিএস ক্যাডারেই পর্বতসম বৈষম্য বিরাজমান। বিসিএস এডমিন, পুলিশদের কাছে বিসিএস শিক্ষা যেন এক নিরীহ প্রজা!