সমালোচক জাতি হিসেবে বাঙালির নাম-ডাক প্রাচীণ কাল থেকেই।বাঙালি আর কিছু পারুক না পারুক ঋণ বা ধার করে চাল কিনে ভাত খেয়ে হলেও অন্যের বদনাম করে অনায়াসে দিন পার করে দিতে জানে। নির্বাচনে ভোট দিতে যদি নাও পারে সে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত চায়ের দোকানে পান বিড়ি খেয়ে আড্ডা দিয়ে একজন নির্বাচক বিশ্লেষক হতে পারে।পরে ফল মিলুক আর না মিলুক সে এক মাস আগে থেকেই যে কাউকেই চায়ের দোকানেই বিজয়ী পার্থী ঘোষণা করতে পারে।
ক্রিকেটে যাকেই অধিনায়ক করা হোক বা কোনো খেলোয়াড় বাদ পড়লো বা দলে সুযোগ পেলে এই বিশ্লেষকগনই হয়ে উঠবেন সমালোচক ক্রিকেট বোদ্ধা।প্রতিটা বল ও ব্যাটিং স্টাইল বা খেলার স্কোর মুখস্থ বলবেন যে,স্বয়ং অনেক কোচও সেসব জানেন না এবং কোচ বা বিসিবির প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত ভুল তা তিনি অকাট্য যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে ছাড়বেন আবার এর উলটো সিদ্ধান্ত নিলেও তার বিপক্ষেও একইভাবে সমালোচক হয়ে যুক্তি দাড় করাবেন।এরকম হাজারো টপিকে আমাদের সমালোচক হয়ে উঠা যেন জন্মগত বা জিনগত অভ্যাস।বর্তমান ডিজিটাল যুগে তাদের আর চায়ের দোকানও লাগে না,দরকার শুধু স্মার্টফোন আর ইন্টার্নেট সেবা।ব্যাস উনারা এবার নিজের ঘর থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুথিন বা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘুম হারাম করে দেবেন।ইদানীং এই পেশাটিকে আরও শৈল্পিক রুপ দিয়েছে কিছু কথিত ইউটিউব চ্যানেল এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
তাদের কাজই হলো তাদের টিআরপি বাড়াতে এমন উদ্ভট, আজগুবি খবর খুজে বের করা আর আমাদের সামনে বাহারী নামে তা পরিবেশন করা এবং বিশ্লেষকদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা।আর এসব সংবাদ গুলোর মধ্যে কার পরকীয়া,কে কাকে নিয়ে পালিয়ে গেল,কার স্ক্যান্ডেল বের হলো ইত্যাদি মুখরোচক টাইটেলের সংবাদ। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পালিয়ে যাওয়া অথবা প্রেমিকের বাড়ি ‘বিয়ের আশ্বাসে’ প্রতারিত নারীর অবস্থান কর্মসূচির ধারাবাহিক প্রতিবেদন।আর আমাদের মত সাধারণ জনগন সেই সংবাদ বিশ্লেষণ করে শুরু করবে ট্রল করা,নানা মন্তব্যে দিন দিন আমাদের এই ব্যধি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।ভাল মন্দ বুঝার ক্ষমতাও আমাদের লোপ পাচ্ছে।
গত কদিন আগেই নাটোরের গুরুদাসপুরের একজন অধ্যাপিকা একজন ইন্টার পড়ুয়া ছাত্রকে বিয়ে করেছেন এবং এখন পর্যন্ত সুখেই বসবাস করছেন।স্বামী পরিত্যক্তা এই সহকারী অধ্যাপক এক সময় আত্মহত্যারও চেষ্টাও করেন ঠিক এই সময়ে ফেসবুকে পরিচয় ও নতুনভাবে বাচার স্বপ্ন দেখায় এই শিক্ষার্থী।তারপর ভাল লাগা এবং সারাজীবন এক সাথে চলার স্বপ্ন নিয়ে ৪০ বছর বয়সী অধ্যাপিকা খাইরুন নাহার কাজী অফিসে গিয়ে ২২ বছর বয়সী ছাত্র মামুনকে বিবাহ করেন।
যে অল্প বয়স্ক একজন শিক্ষার্থী তার দ্বিগুণ বয়স ও অধিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন নারীকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে এসেছেন এবং শুধু তাই নয় অসামাজিক ও অধর্মের কাজ না করে আইনসঙ্গত ভাবে বিয়ে করে সুখে আছেন তাকে আমাদের উচিৎ ছিল এই নৈতিক ও বীরত্ব সূচক মানবিক কাজের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তাদের নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানানো কিন্ত আমাদের জিনগত অভ্যাসে সেটা না করে তাদের নিয়েই করা হচ্ছে যত বাজে মন্তব্য এবং তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলের শিকার হচ্ছেন। এই অধ্যাপিকা আজ আত্মহত্যা করলেও এই বিশ্লেষকগণ ধর্মের বানী শুনিয়ে জাহান্নামী ঘোষণা করতেন পৃথিবীতেই,বুদ্ধিজীবীরাও বলতেন বাস্তবতা বিবর্জিত আবেগী নারী।সাথে যুক্ত হতো পরকীয়াসহ নানা বিশেষণ।আমরা কলম চালাতাম “অবক্ষয়ের দাড়প্রান্তে আজ সমাজ” নামে।
এই যে এত মন্তব্য করে আমরা মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলি তাতে আসলে কী লাভ হয় আমাদের,কী লাভ হয় মানুষের বরং আমাদের মন্তব্যে অধিকাংশ মানুষ নানা ভাবে সাফারার হন এবং কেউ কেউ সেসব সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন আর তার এই আত্মহত্যা নিয়েও আবার নানা মন্তব্যে ফেসবুকে সমালোচনা করি অথচ তার এই আত্মহত্যার পেছনে যে আমারও পরোক্ষ ইন্ধন ছিল,আমার লাইক শেয়ার আর সমালোচনাতেও যে তার জীবন বিষিয়ে তুলেছিল সে কথা আমরা একবারো ভাবি না।
একজন মানুষ যদি সমাজ,ধর্ম বা আইনের বিপক্ষে না গিয়ে যে কোনো বয়সে বিয়ে করে তাতে আমাদের ক্ষতি কী,আমরা তো তাদের জন্য কিছু করতে পারি না বরং আমরা এমন স্বামী পরিত্যক্তা বা বিধবা শোনলে ভদ্রতার বেশে সহানুভূতির নাম দিয়ে সুযোগ খুজি কিন্ত একবারও ভাবি না সে শুধু তার জৈবিক চাহিদার জন্যই পুরুষকে অবলম্বন করে না বরং স্থিতিশীল সামাজিক জীবনের নিশ্চয়তা চায়।আর এই অন্তর্নিহিত মর্মই হয়তো উপলব্ধি করেছিল মামুন,তাই সে স্রোতের বিপরীতে বিয়ের এই সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে শুধু তাই নয় বরং বাঙালির জিনগত বৈশিষ্ট্যের গালে চপোটাঘাত করে ছুড়ে দিয়েছে অমর বানী “মন্তব্য কখনও গন্তব্য ঠেকাতে পারে না”।তবুও যদি আমাদের মুখ বন্ধ হয়।যে কোনো কাজে সমালোচক বা মন্তব্যকারীদের কথায় যেন আমরা থেমে না যাই এই শিক্ষাও আমরা নিতে পারি এই বানী থেকে।লেখকঃ কলামিস্ট ও নাট্যকার
ইমেইলঃ [email protected]
ইমেইলঃ [email protected]
Enjoyed examining this, very good stuff, regards. “Whenever you want to marry someone, go have lunch with his ex-wife.” by Francis William Bourdillon.