সরকারি চাকুরী যেখানে সোনার হরিণ,একজন বিসিএস ক্যাডার সেখানে প্লাটিনাম থেকেও দামী কিছু। আর এই সুযোগটিই প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে আসছেন অনেক প্রতারক। তানভির হাসান মিদ্রা তাদেরই একজন।এটিই তার ফেসবুক আইডি,তবে মৃধা লিখার বানান ভুল করে হয়তো মিদ্রা লিখেন। তবে বানান যাইহোক,তার ফেসবুক আইডি থেকে জানা যায় তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
তিনি পরিচয় দেন জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আবার একই সাথে ৪০তম বিসিএসের ট্যাক্স ক্যাডার হিসেবেও পরিচয় দেন বিভিন্ন জনের কাছে।গত এক বছর আগে রেজাল্ট প্রকাশ হওয়া ৪০ তম বিসিএসের ট্যাক্স ক্যাডারগণ চাকুরিতে যোগদান করে কয়েক মাস পাড় করলেও তানভির এখনও ব্যাংকে চাকুরী করছেন বলে জানান। ফেসবুকে পরিচয় ও পরবর্তীতে বিয়ের প্রস্তাব আসায় কয়েকজন তরুণীর অভিভাবক তার সম্পর্কে জানতে গেলে তার তথ্যে সন্দেহজনক মনে হয়। ৪০ তম বিসিএসে যোগদানকৃত ট্যাক্স ক্যাডারদের যোগাযোগ করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন তানভির নামে আরও পাঁচ জনকে তার তথ্য দিতে হয়েছে, সে আমাদের ব্যাচের কেউ না। তিনি আরও জানান- এই ব্যক্তি তাদের ফেসবুক গ্রুপেও যুক্ত হয়েছিলেন কিন্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করার সময় তাকে সন্দেহ হলে গ্রুপ থেকে ব্যান করা হয়। তার ধারণা সে একজন প্রতারক এবং মেয়েদের ফাদে ফেলে প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইল করতে চাচ্ছে হয়তো। ঝামেলা এড়াতে তারা আইনের আশ্রয় নেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের টার্গেট করেন তানভির। দেখান বিয়ের প্রলোভন। তারাপর তথ্য চাইলেই বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ধরা খেলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। একাধিক মেয়ের অভিভাবক এই তানভিরের সাথে কথোপকথনের স্ক্রিনশট দিয়ে বিডিনিউজ ট্র্যাকারে অভিযোগ দিলে যোগাযোগ করা হয় এই কথিত ট্যাক্স ক্যাডারের সাথে।কিন্ত প্রথমে ক্যাডার হিসেবে দাবী করলেও,পরবর্তীতে তার ক্যাডার বা চাকুরির ডকুমেন্টস চাইলেই দমে যান তিনি।পরে মেইলে ডকুমেন্টস পাঠাতে স্বীকার করলেও আর পাঠাননি।এমনকি ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।সামাজিক সমস্যা ও আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করা নৃবিজ্ঞানী ও কলামিস্ট কাবিল সাদির কাছে এই সামাজিক অপরাধের প্রেক্ষাপট ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সরকারি চাকরি বিয়ের বাজারে এক সময় অভিভাবক মহলে অধিক গুরুত্ব থাকলেও বর্তমান বিয়ের পাত্রী বা প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও দুর্বলতার বড় প্রভাব ফেলে।
সে ক্ষেত্রে বিসিএস ক্যাডার হলে তো কথাই নেই।সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দই থাকে বিসিএস ক্যাডার পাত্র/পাত্রী। আর আধুনিক প্রতারক চক্র সেটিই গ্রহণ করেছে।কিন্ত বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তথ্য পাওয়া সহজলভ্য হওয়ায় তাদের চিনহিত করা সহজ হচ্ছে।তিনি আরও জানান,অবশ্যই তরুণী ও অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।সরকারি চাকরি বা বিসিএস ক্যাডার নাম শোনেই যেন ভুল পথে তথ্যহীনভাবে কারো ফাদে না পরেন।তাছাড়া সরকারি চাকুরির পাত্রই একমাত্র সুপাত্র বা সুপ্রেমিক এই ধারণারও পরিবর্তন আবশ্যক বলে মনে করেন তিনি।